শিঙ্গা লাগানো

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি মেরাজের রাত্রে ফেরেশতাদের যে দলেরই নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছি সকলেই বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার উম্মতকে শিঙ্গা লাগানোর হুকুম করুন।  (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৭৯)

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকেও এ হাদীসটি বর্ণিত আছে, তাতে আছে, হে মুহাম্মাদ! আপনার জন্য শিঙ্গা লাগানোকে আবশ্যক করে নিন। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ৩৪৭৭)

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা যেসব জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করো তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো শিঙ্গা লাগানো এবং কুস্তে বাহরী। (সহীহ বুখারীঃ ৫৬৯৬, মুসলিমঃ ১৫৭৭)

কুস্তে বাহরী এক জাতীয় সাদা কাঠ বিশেষ। বিভিন্ন রোগে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকের মতে এটা সাদা চন্দন।

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন. রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন জিনিসের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে, শিঙ্গা লাগানো, মধু পান করা, তপ্তলোহা দ্বারা দাগ দেয়া। তবে আমি আমার উম্মতকে তপ্তলোহা দ্বারা দাগ লাগানো থেকে নিষেধ করছি। (সহীহ বুখারীঃ ৫৬৮০,৫৬৮১)

উল্লেখিত হাদীসসমূহে শিঙ্গা লাগানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং রোগ নিরাময়ে শিঙ্গা লাগানোর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।



শিঙ্গা লাগানোর উপকারিতা এবং শিঙ্গা লাগানোর স্থান

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শিঙ্গা লাগানেওয়ালা কতোইনা উত্তম বান্দা! সে দূষিত রক্ত বের করে, মেরুদন্ডকে আরাম পৌঁছায় এবং চোখের জ্যোতি বাড়ায়। (জামে তিরমিযীঃ ২০৫৩, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৭৮)

হযরত ইবনে উমর রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, খালি পেটে শিঙ্গা লাগানো শরীরের জন্য খুবই ফলপ্রসূ, তা জ্ঞান ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ৩৪৮৮)

হযরত আবূ কাবশা আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের মাথায় এবং উভয় কাঁধের মাঝখানে শিঙ্গা লাগাতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি এসব (স্থান থেকে) দূষিত রক্ত বের করে দেয়, তার জন্য অন্য কিছু দ্বারা কোন রোগের চিকিৎসা না করলেও কোন ক্ষতি হবেনা। (সুনানে আবু দাউদঃ৩৮৫৯)

হযরত নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাদেমা সালমা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কেউ মাথা ব্যথার অভিযোগ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি তাকে শিঙ্গা লাগাতে বলতেন। (সুনানে আবূ দাউদঃ৩৮৫৮)

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘাড়ের দুপাশের উভয় রগে এবং উভয় কাঁধের মাঝখানে শিঙ্গা লাগাতেন। (জামে তিরমিযীঃ ২০৫১)

হযরত আবূ কাবশা আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষমিশ্রিত বকরির গোস্ত খাওয়ার কারণে তিনি নিজের মাথার তালুতে শিঙ্গা লাগান। (হাদীসের বর্ণনাকারী) মা‘মার রহ.বলেন, বিষের কোন প্রতিক্রিয়া না থাকা সত্ত্বেও আমি আমার মাথার তালুতে শিঙ্গা লাগালাম। ফলে আমার স্মরণশক্তি লোপ পায়। এমনকি নামাযের মধ্যে আমাকে সূরা ফাতেহা বলে দিতে হতো। (আবূ দাঊদঃ৩৮৬০)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুহাইনা রাযি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহরিম অবস্থায় মাথা ব্যথার কারণে মাথার মাঝখানে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (সহীহ বুখারীঃ৫৬৯৮,৫৭০০,৫৭০১)

(হাদীসে আছে) মুহরিম অবস্থায় পায়ের ব্যথার কারণে পায়ের পিঠে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (সুনানে কুবরা,নাসাঈঃ৭৫৫৪)

হযরত যাবির রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, (একবার) রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিতম্বে ব্যথা হওয়ার কারণে নিতম্বে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৩৮৬৩)

উল্লেখ্য, ঘাড়ের দুপাশের উভয় রগে শিঙ্গা লাগানো মাথা ও তার সাথের অঙ্গসমূহ চেহারা, দাঁত, নাক, চোখ ও কানের রোগসমূহ আরোগ্য লাভ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। (যাদুল মাআদ ৪/৫১)

মাথায় বা মাথার পিছনের অংশে শিঙ্গা লাগানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবে, তাই রক্তের চাপ বেশি হলে বা মাথা ব্যথা হলেই কেবল মাথায় শিঙ্গা লাগাবে । বিনা প্রয়োজনে মাথায় শিঙ্গা লাগাবে না, এতে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার আশংকা আছে। (যাদূল মাআদ ৪/৫৩)

 মাসের কোন্ সপ্তাহে শিঙ্গা লাগাবে আর কোন্ সপ্তাহে লাগাবে না

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা যেদিনগুলিতে শিঙ্গা লাগাও তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো (চাঁদের) সতের, উনিশ ও একুশ তারিখ। (জামে তিরমিযীঃ ২০৫১)

হযরত আনাস রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগাতে চায় সে যেন চাঁদের সতের, উনিশ ও একুশ তারিখকে তালাশ করে। তোমাদের কারো রক্তের চাপ বেড়ে গেলে সে যেন  (শিঙ্গা লাগিয়ে) রক্তের চাপ কমিয়ে নেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৮৬)

হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি (চাঁদের) সতের, উনিশ ও একুশ তারিখে শিঙ্গা লাগাবে,এ শিঙ্গা তার সকল রোগের (তথা রক্তের চাপের কারণে যেসব রোগ হয়) নিরাময়কারী হবে। (সুনানে আবূ দাউদঃ ৩৮৬১)

এসব হাদীস হাকীম বা চিকিৎসকদের কথাকে সমর্থন করে। তারা বলেন, চান্দ্রমাসের শুরু বা শেষে শিঙ্গা লাগানো থেকে দ্বিতীয় ভাগের শুরুতে তথা তৃতীয় সপ্তাহে শিঙ্গা লাগানো বেশি উপকার। কেননা মাসের শুরুতে রক্তের চাপ থাকে না। মাসের মাঝামাঝি সময়ে চাঁদের আলো বাড়ার সাথে সাথে রক্তের চাপও বেড়ে যায় এবং মাসের শেষের দিকে চাপ কমতে থাকে। তবে প্রয়োজনের সময় মাসের শুরু এবং শেষেও শিঙ্গা লাগানো যায়। (যাদুল মাআদঃ ৫০-৫৪)

উল্লেখ্য, চাঁদের সতের, উনিশ এবং একুশ তারিখে শিঙ্গা লাগানো ভালো, যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই তারিখগুলোতে শিঙ্গা লাগাতেন এবং সাহাবা রাযি. কে হুকুম করতেন। কিন্তু এই তারিখগুলো জরুরী নয়, এটা স্পষ্ট কথা। কাজেই প্রয়োজনে জোড় তারিখগুলিতেও লাগানো যাবে। এটাই হাদীসের ইশারা এবং চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা। কারণ, হাদীসে এই তারিখগুলিকে ভালো বলা হয়েছে; জরুরী বলা হয়নি। (ফাতহুল বারীঃ ১০/১৮৪)

চান্দ্রমাসের তৃতীয় সপ্তাহের শিঙ্গা লাগানোর পদ্ধতিঃ

হযরত ইবনে উমর রাযি. বলেন, হে নাফে! আমার শরীরে রক্তের চাপ বেড়ে যাচ্ছে , তাই একজন শিঙ্গাওয়ালা যুবক ডেকে আনো; বালক কিংবা বৃদ্ধকে আনিও না। সুতরাং যেকেউ শিঙ্গা লাগাতে চায়, সে যেন আল্লাহর উপর ভরসা করে বৃহস্পতিবার শিঙ্গা লাগায়। শুক্র, শনি ও রবিবার যেন না লাগায়। আবার সোম ও মঙ্গলবার শিঙ্গা লাগাবে, কিন্তু বুধবার শিঙ্গা লাগাবে না, কেননা হযরত আউয়ূব আ. বুধবারেই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, আর) শ্বেতকুষ্ঠ রোগ বুধবার দিনে অথবা রাতে জন্ম লাভ করে। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ৩৪৮৮, ফাতহুল বারী ১০/১৮৪)

হযরত কাবশা বিনতে আবূ বাকরাহ রহ. থেকে বর্ণিত, তার পিতা নিজের পরিবারের লোকদেরকে মঙ্গলবার শিঙ্গা লাগাতে নিষেধ করতেন এবং তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মঙ্গলবার রক্ত চলাচলের দিন এবং সেই দিনে এমন একটি মূহুর্ত আছে যাতে রক্ত (প্রবাহিত হলে তা) বন্ধ হয় না। (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৩৮৬২)

তবে মঙ্গলবার যদি আরবী মাসের সতের তারিখের সাথে মিলে যায় তাহলে ঐ মঙ্গলবারে শিঙ্গা লাগানো সারা বছরের রোগের চিকিৎসা। (মাজমাউয যাওয়ায়িদঃ হাঃ৮৩৩৩)

সুতরাং এই মঙ্গলবার ছাড়া অন্যান্য মঙ্গলবারে শিঙ্গা না লাগানো উত্তম, তবে প্রয়োজনে লাগানো যায়। তাই ইবনে উমরের রাযি. বর্ণনার সাথে কাবশা রহ. এর হাদীসের কোন সংঘর্ষ নেই।

তাবেঈ ইমাম যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বুধ অথবা শনিবার শিঙ্গা লাগানোর দরুন শ্বেতকুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হবে সে যেন নিজেকেই ধিক্কার দেয়। (এই বর্ণনাটির প্রতি লক্ষ্য করেই ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.শনি ও বুধবার শিঙ্গা লাগানোকে অপছন্দ করেছেন।) (সুনানে কুবরা বায়হাক্বীঃ ১৯৫৪০,তানযীহুশ শরীআহ ২/৩৫৮, মিরকাত ৯/৩৭০)

উল্লেখ যে, হাদীসে শিঙ্গা লাগানোর জন্য যে দিনগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা উত্তম পর্যায়ের। ঐ দিনগুলোতে লাগানো জরুরী নয়, তাই বিশেষ জরুরত পড়লে নিষিদ্ধ দিনগুলোতেও লাগানো যাবে। তবে বুধবার ও শনিবারে শিঙ্গা না লাগানোর ব্যাপারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করবে।

বি: দ্রঃ  সহজ পদ্ধতিতে শিঙ্গা লাগানোর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ডাঃ এম,আর,আযাদ মোবাঃ ০১৬৮২৭৭১১৩৬

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী