Hajj-E-Tamattu:তামাততু হজের নিয়ম


তামাততু হজের নিয়ম
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হাজ্বিরা বেশীরভাগ তামাততু হাজ্ব করে থাকেন। তাই হাজ্বীদের খেদমতে হজ্জ্বে তামাততু এর নিয়ম বর্ণনা করিলাম।

১. ওমরাহর ইহরাম (ফরজ) ·
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেরে গোসল বা অজু করে নিতে হবে · মিকাত অতিক্রমের আগেই সেলাইবিহীন একটি সাদা কাপড় পরিধান করুন, অন্যটি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিন · শুধু ওমরাহর নিয়ত করে এক বা তিনবার তালবিয়া পড়ে নিন · তালবিয়া হলো ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত, আমি হাজির, তোমার কোনো অংশীদার নেই, তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিয়ামতের সামগ্রী সবই তোমার, (সর্বযুগে ও সর্বত্র) তোমারই রাজত্ব, তোমার কোনো অংশীদার নেই। 

২. ওমরাহর তাওয়াফ (ফরজ) ·
অজুর সঙ্গে ইজতিবাসহ তাওয়াফ করুন। ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচের দিক থেকে পেঁচিয়ে এনে বাঁ কাঁধের ওপর রাখাকে ‘ইজতিবা’ বলে।

তাওয়াফঃ · হাজরে আসওয়াদকে সামনে রেখে তার বরাবর ডান পাশে দাঁড়ান ( ডান পাশে তাকালে সবুজ বাতিও দেখতে পাবেন)। এরপর দাঁড়িয়ে তাওয়াফের নিয়ত করুন। তারপর ডানে গিয়ে এমনভাবে দাঁড়াবেন, যেন হাজরে আসওয়াদ পুরোপুরি আপনার সামনে থাকে। এরপর হাত তুলে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলুন। পরে হাত ছেড়ে দিন এবং হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে ডান দিকে চলতে থাকুন, যাতে পবিত্র কাবাঘর পূর্ণ বাঁয়ে থাকে। পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা সুন্নত । ‘রমল’ অর্থ বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদম রেখে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা। · রুকনে ইয়ামানিকে সম্ভব হলে শুধু হাতে স্পর্শ করুন। চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। · রুকনে ইয়ামানি থেকে হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান্নার, ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার, ইয়া আযিযু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন’ বলুন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে চক্কর পুরো করুন। · পুনরায় হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন। এভাবে সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করুন। · হাতে সাত দানার তসবি অথবা গণনাযন্ত্র রাখতে পারেন। তাহলে সাত চক্কর ভুল হবে না। · এ সময় মনে যেই দোয়া, সুরা, আয়াত মনে আসে তা দিয়ে দোয়া করবেন। কারণ এটা দোয়া কবুলের সময়। 

৩. তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ (ওয়াজিব মাকামে ইবরাহিমের পেছনে বা মসজিদুল হারামের যেকোনো স্থানে তাওয়াফের নিয়তে (মাকরুহ সময় ছাড়া) দুই রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করুন। মনে রাখবেন, এটা দোয়া কবুলের সময়। এর পর মন ভরে জমজমের পানি পান করুন। 

৪. ওমরাহর সাঈ (ওয়াজিব) · Sayee
সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে (এখন আর পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) কাবা শরিফের দিকে মুখ করে সাঈয়ের নিয়ত করে, দোয়ার মতো করে হাত তুলে তিনবার তাকবির বলে দোয়া করুন। তারপর মারওয়ার দিকে রওনা হয়ে দুই সবুজ দাগের মধ্যে (এটা সেই জায়গা, যেখানে হজরত হাজেরা (রা.) পানির জন্য দৌড়েছিলেন) একটু দ্রুত পথ চলে মারওয়ায় পৌঁছালে এক চক্কর পূর্ণ হলো। মারওয়া পাহাড়ে উঠে কাবা শরিফের দিকে মুখ করে দোয়ার মতো করে হাত তুলে তাকবির পড়ুন এবং আগের মতো চলে সেখান থেকে সাফায় পৌঁছালে দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হলো এভাবে সপ্তম চক্করে মারওয়ায় গিয়ে সাঈ শেষ করুন। প্রতি চক্করে সাফা ও মারওয়াতে হাত তুলে দোয়া করুন। 
৫. হলক করা (ওয়াজিব)
পুরুষ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে সম্পূর্ণ মাথা ন্যাড়া করবেন। তবে মাথার চুল ছাঁটতেও পারেন। নারী হলে চুলের মাথা এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটতে হবে। এ পর্যন্ত ওমরাহর কাজ শেষ হজের ইহরাম না বাঁধা পর্যন্ত ইহরামের আগের মতো সব কাজ করতে পারবেন।

৬. হজের ইহরাম (ফরজ) 
হারাম শরিফ বা বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ জোহর নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছে যাবেন। 

৭. মিনায় অবস্থান (সুন্নত)
৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করুন এবং এ সময়ে মিনায় অবস্থান করুন।
৮. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান (ফরজ)
 আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। ৯ জিলহজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন। মসজিদে ‘নামিরা’য় উভয় নামাজ জামাতে পড়লে একসঙ্গে আদায় করুন। · আর মসজিদে নামিরা যদি আপনার কাছ থেকে দূরে থাকে, তাহলে সেখানেই অবস্থান করবেন। নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসরের নামাজ সুবিধামতো আলাদাভাবে আদায় করুন। হজের কোনো বিষয়ে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হলে ঝগড়া করবেন না। আপনি যেই আলেমের ইল্ম ও তাকওয়ার ওপর আস্থা রাখেন, তাঁর সমাধান অনুযায়ী আমল করবেন। তবে সে অনুসারে আমল করার জন্য অন্য কাউকে বাধ্য করবেন না। · মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার দিকে রওনা হোন। 
৯. মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) 
আরাফায় সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে এশার সময়ে মাগরিব ও এশা এক আজান এবং এক ইকামতে একসঙ্গে আদায় করুন। এখানেই রাত যাপন করুন (এটি সুন্নত)। ১০ জিলহজ ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবশ্যই অবস্থান করুন (এটি ওয়াজিব)। তবে শারীরিকভাবে দুর্বল (অপারগ) ও নারীদের বেলায় এটা অপরিহার্য নয়। · রাতে ছোট ছোট ছোলার দানার মতো ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করুন। মুজদালিফায় কঙ্কর খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
১০. কঙ্কর মারা (প্রথম দিন) 
 ১০ জিলহজ ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধু বড় জামারাকে (বড় শয়তান) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন (ওয়াজিব)। ওই সময়ে এটি করা সম্ভব না হলে রাতেও কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ। · কঙ্কর নিক্ষেপের স্থানে বাংলা ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং মেনে চলুন।
১১. কোরবানি করা (ওয়াজিব) 
 ১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পরই কেবল কোরবানি নিশ্চিত পন্থায় আদায় করুন। · কোরবানির পরই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে মাথা ন্যাড়া (হলক) করুন (ওয়াজিব)। তবে চুল ছোটও করতে পারেন। · খেয়াল রাখতে হবে: কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা জরুরি ।
১২. তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)
১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারত করা উত্তম। তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে জিয়ারত করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করবেন।
১৩. সাঈ (ওয়াজিব)
তাওয়াফ শেষে সাফা-মারওয়া গিয়ে সাঈ করুন। সাঈ সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় গিয়ে শেষ হয়। সাফা থেকে মারওয়া প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চক্কর। এভাবে সাতটি চক্কর সম্পূর্ণ হলে একটি সাঈ পূর্ণ হয় (মনে রাখার জন্য মারওয়াতে ১,,,৭ নম্বর চক্করগুলো হবে)।
১৪. কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব) 
 ১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন তিন (ছোট, মধ্যম, বড়) শয়তানকেই কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব) করতে হবে। ১১-১২ জিলহজ দুপুর থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় শুরু। ভিড় এড়ানোর জন্য আসর নামাজের পর অথবা সুবিধাজনক সময়ে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে-প্রথমে ছোট, মধ্যম, তারপর বড় শয়তানকে। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় শেষ করুন। · ওই সময়ে এটি করা সম্ভব না হলে রাতেও কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর নিক্ষেপ করা উত্তম ও নিরাপদ।

১৫. মিনায় রাত যাপন মিনায় অবস্থানরত দিনগুলোতে (১০ ও ১১ জিলহজ) মিনাতেই রাত যাপন করুন। আর যদি ১৩ তারিখ ‘রমি’ (কঙ্কর ছুড়ে মারা) শেষ করে ফিরতে চান (সুন্নত), তবে ১২ তারিখ রাত যাপন করুন। 

১৬. মিনা ত্যাগ ১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে অথবা সন্ধ্যার পর ভোর হওয়ার আগে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতেই হবে-এটা ঠিক নয়। তবে সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম। 



১৭. বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব) · বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয় (ওয়াজিব)। · তবে হজ শেষে নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে পরিণত হয়ে যায়। · নারীরা প্রাকৃতিক কারণে নারীদের মাসিকের কারণে বিদায়ী তাওয়াফ করতে না পারলে কোনো ক্ষতি নেই। এজন্য দম বা কাফফারাও দিতে হয় না।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী