মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্যঃ

 মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্যঃ

ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন হচ্ছে মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য। এই মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর কিছু গুরুত্বপূর্ন পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

১। মৌসুমি জলবায়ু ১০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দেখা যায়। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দেখা যায়।

২। মৌসুমি জলবায়ু ভারত, বাংলাদেশ ও দক্ষিন ও পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোতে বেশি লক্ষ্য করা যায় । অন্যদিকে,ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু সাধারণত ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশ গুলিতে দেখা যায়। যেমন – ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্স।

৩। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মকালে বিপরীত মুখী উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুতে শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু ও গ্রীষ্মকালে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়।

৪। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে প্রধান চারটি ঋতুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । যথা – শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে কেবল দুটি ঋতুর দেখা যায়। যথা – শীত ও গ্রীষ্ম

৫। মৌসুমি জলবায়ুর গ্রীষ্মকাল হয় আর্দ্র এবং শীতকাল হয় শুষ্ক । অন্যদিকে, ভূমধসাগরীয় জলবায়ুর গ্রীষ্মকাল হয় শুষ্ক এবং শীতকাল হয় আর্দ্র।

৬। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কিছু স্থানীয় বায়ু প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। যেমন – আঁধি, কালবৈশাখী। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলেও স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের প্রাধান্য দেখা যায় । যেমন – মিস্ট্রাল, সিরক্কো

৭। মৌসুমি জলবায়ুতে মোট বৃষ্টিপাতের ৮০% থেকে ৯০% বর্ষাকালেই হয়ে থাকে। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে যে টুকু বৃষ্টিপাত হয় তার বেশির ভাগ শীতকালে হয়ে থাকে।

৮। মৌসুমি জলবায়ুতে প্রধানত দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে । অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মূলত শীতকালে দক্ষিন- পশ্চিম, পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

৯। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যায় এবং শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকে। অন্যদিকে, ভূমধসাগরীয় জলবায়ুতে শীতকালের দুই তিন মাস ব্যতিত সারা বছর রৌদ্র উজ্জ্বল মেঘমুক্ত আবহাওয়া বিরাজ করে । গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে ২১ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে এবং শীতকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।

১০। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে পর্নমোচী বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায়। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে সাধারণত গুল্ম জাতীয় ও ঝোপঝাড়ের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী