মহিলাদের হজ্ব

মহিলাদের হজ্ব ফরয হওয়ার শর্ত: প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই পরিমান টাকা-পয়সা বা জমিজমা থাকা যা দিয়ে নিজের এবং একজন মাহরামের হজ্বে যাওয়া-আসা ও থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ বহন সম্ভব হয়। কোনো মহিলার যথেষ্ট সম্পদ আছে কিন্তু সাথে যাওয়ার মতো কোনো মাহরাম নেই। তাহলে তার উপর হজ্ব ফরয হবে না। কোনো মহিলার মাহরাম হজ্বে যাচ্ছে সেও তার সাথে হজ্বে চলে গেল, এক্ষেত্রে সে তার মাহরামকে কোনো খরচ না দিলেও তার ফরয আদায় হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ৩/৪৬৪ যাকারিয়া কুতুব খানা)
* যদি কারো স্ত্রীর উপর হজ্ব ফরয হয়ে যায়, আর সে হজ্বে যাওয়ার জন্য কোনো মাহরামও পেয়ে যায় (যেমন ছেলে, পিতা, চাচা, ভাই, মামা, এদের মধ্য থেকে কাউকে) তাহলে স্বামী তাকে হজ্বে যেতে নিষেধ করতে পারবে না। তবে নফল হজ্বের ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে যেকোনো মাহরামের সাথে যেতে নিষেধ করতে পারবে। আর স্ত্রীও উক্ত নিষেধাজ্ঞা মানতে বাধ্য থাকবে। (রদ্দুল মুহতার ৩/৪৬৫ যাকারিয়া)

মাহরাম কারা?: 

যাদের সাথে কখনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হয় না তারাই মাহরাম । যেমন: পিতা,পুত্র, আপন ও সৎ ভাই, দাদা-নানা, আপন চাচা ও মামা, ছেলে বা মেয়ের ঘরের নাতি এবং তাদের ছেলে, জামাতা, শ্বশুর, দুধ ভাই, দুধ ছেলে ইত্যাদি। তবে একা একা দুধ ভাইয়ের সাথে যাওয়া এবং যুবতী শ্বাশুরীর জামাতার সাথে যাওয়া নিষেধ। রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৪
* মুতাআখখিরীন ঊলামায়ে কেরামের ফাতাওয়া হলো, বর্তমান ফেতনার যামানায় শুধুমাত্র নিজের খান্দানের দ্বীনদার মাহরাম এর সাথে হজ্বে যাবে। অন্যান্য মাহরামের সাথে যাবে না । ইসলাহুল খাওয়াতীন
মাহরাম এর বয়স: মাহরামের জন্য সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া এবং বালেগ হওয়া শর্ত । তবে অনেক ফকীহ এর মতে মাহরাম যদি মুরাহিক তথা বালেগ হওয়ার কাছাকাছি হয়, তাহলে তাকে নিয়েও সফরে যাওয়া জায়িয আছে। (রদ্দুল মুহতার ৩/৫৩১-৩২ রশীদিয়া)
* বৃদ্ধ মহিলাও মাহরাম ছাড়া অন্যান্য মাহরামওয়ালা মহিলার সাথে হজ্বে যেতে পারবে না । (মুসলিম শরীফ হা.নং ১৩৩৮, মানাসিক পৃ. ৫৬)
* কোনো মহিলার মাহরাম না থাকলে ফরয হজ্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে বিবাহ করা তার জন্য জরুরী নয় । (রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৪)
মাহরাম না থাকলে করণীয়:
কোনো মহিলার নিকট মাহরাম নিয়ে হজ্বে যাওয়ার টাকা আছে, কিন্তু সে কোনো মাহরাম পাচ্ছে না যে তাকে হজ্বে নিয়ে যাবে, তাহলে সে শারিরীকভাবে হজ্ব আদায়ের সক্ষমতা থাকা পর্যন্ত মাহরামের অপেক্ষা করবে। যখন শারিরীকভাবে অক্ষম হয়ে যাবে তখন কারো মাধ্যমে বদলী হজ্ব করাবে। এছাড়া হজ্ব করতে না পারার ক্ষেত্রে বদলী হজ্বের ওছিয়্যাত করে রাখাও ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৯)
মাহরাম ছাড়াই হজ্ব:
যদি কোনো মহিলা স্বামী বা মাহরাম ছাড়াই ফরয হজ্ব আদায় করে ফেলে, তাহলে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে বটে কিন্তু সে গুনাহগার হবে। এগুনাহের জন্য তাওবা-ইস্তিগফার করে নেওয়া জরুরী। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৫)
মাহরাম সৌদিআরব থাকলে:
যদি কোনো মহিলার স্বামী বা মাহরাম সৌদিআরব থাকে, আর সে তাকে নিয়ে হজ্ব করতে চায়,তথাপি তার জন্য মাহরাম ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সফরে বের হওয়া জায়িয হবে না। (ফাতাওয়া হাক্কানিয়া ৪/২২১)
ইদ্দত অবস্থায় থাকলে:
যদি কোনো মহিলা স্বামীর মৃত্যুর কারণে বা তালাকের কারণে ইদ্দত অবস্থায় থাকে তাহলে তার জন্য ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে হজ্বের সফরে বের হওয়া জায়িয নেই। তথাপি কেউ যদি এই আবস্থায় গিয়ে হজ্ব করে ফেলে তাহলে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সে ইদ্দত অবস্থায় সফর করার কারণে গুনাহগার হবে।(রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৫)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী