পবিত্র আশুরা


ত্যাগের মহিমা ছড়াক সবখানে

পবিত্র আশুরা 

মহররম মাসের ১০ তারিখ—পবিত্র আশুরা। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে গভীর শোকের দিন। এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদত বরণ করেন। একদিকে শোক, অন্যদিকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থানের অতি উজ্জ্বল এই দৃষ্টান্ত বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের কাছে অমর হয়ে আছে।
ইসলামের ইতিহাসে মহররমের ১০ তারিখ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারবালা প্রান্তরে পরিবার-পরিজন, সঙ্গীসাথিসহ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত বরণের মর্মান্তিক ঘটনার আগেও এই তারিখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। ইসলাম ধর্মের ভাষ্যমতে, আদি মানব হজরত আদম (আ.) এই দিনে পৃথিবীতে আগমন করেন, তাঁর তওবা কবুল হয় এই দিনেই। এই দিনে হজরত নুহ (আ.)-এর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পায়।
তবে মুসলমানরা দিবসটি পালন করে মূলত কারবালা প্রান্তরের সেই মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণে। মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এ জন্য ষড়যন্ত্র ও বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেন। মহানবী (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপানে হত্যা করা হয়। ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদত বরণ করেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। এই হত্যাকাণ্ড ছিল অত্যন্ত নির্মম। নিষ্ঠুর ইয়াজিদ বাহিনী অসহায় নারী ও শিশুদের পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি।
বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে অত্যন্ত সম্প্রীতির পরিবেশে আশুরা পালিত হয়ে আসছে। তবে ২০১৫ সালে উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা ঢাকায় আশুরার আগের রাতে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। বগুড়া জেলায় এক শিয়া মসজিদে নামাজরত একজন মুসল্লিকে হত্যার ঘটনাও ঘটে। বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তা ছিল অচিন্তনীয়। এ ঘটনার পর থেকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক আছে এবং সামগ্রিকভাবে সরকারের কঠোর অবস্থান ও জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ফলে তাদের তৎপরতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এবার আশুরা পালন নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় তাজিয়া মিছিলে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে, সে জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র আশুরা যাতে পালিত হয়, সে লক্ষ্যে সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
আশুরার মূল চেতনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে সাময়িক আঘাত এলেও চূড়ান্ত বিজয় অবধারিত। এটাই মহররমের শিক্ষা। কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না’। অন্যায়-অবিচার ও ষড়যন্ত্র থেকে পৃথিবীকে মুক্ত রাখতে ত্যাগের মহিমা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী