হজ-পরবর্তী জীবন কেমন হওয়া উচিত-২

হজ-পরবর্তী জীবন কেমন হওয়া উচিত-২    

গত নিবন্ধে আমরা হজের পর করণীয় আলোচনা করতে গিয়ে নামাজ, রোজা ও জাকাতের নির্দিষ্ট কিছু ফজিলত সম্পর্কে কথা বলেছিলাম। তেমনিভাবে কোরআন ও হাদিসে নামাজ, রোজা ও জাকাতের নির্দিষ্ট ফজিলতেরই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু হজের ফায়দা বর্ণনা করতে গিয়ে শুধু বলা হয়েছে- অর্থ : ‘যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থানসমূহে উপস্থিত হয়।’ -সূরা হজ : ২৮
এখানে নামাজ-রোজার মতো হজের কোনো নির্দিষ্ট ফায়দা উল্লেখ করা হয়নি; বরং শুধুমাত্র সশরীরে সেখানে উপস্থিত হয়ে তা সরাসরি উপলব্ধি করতে বলা হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, হজের ফায়দা কাউকে বলে বোঝানোর মতো নয়। কারো থেকে শুনেও তা বোঝা যাবে না। এটি শুধু অনুভূতি দিয়ে বোঝার বিষয়। এ জন্যই মানুষ এ সময়ে তার অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন অনুভব করতে পারে।
তার চিন্তা-ধারা, কার্যকলাপে সে পরিবর্তন লক্ষ করে। আর এর প্রতিফলন ঘটে তার বাস্তব জীবনে। এমনকি তার আগ্রহ-উদ্দীপনার ধারা পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম হয়ে ওঠে। আর সে নিজেও অনুধাবন করতে পারে যে, এখন সে আর আগের সেই মানুষটি নেই, এখন সে সম্পূর্ণ ভিন্ন কেউ হয়ে গেছে।
এখানে একটি কথা জেনে নেয়া উচিত যে, হজের এত ব্যাপক ফায়দা থাকলেও প্রত্যেকে শুধু নিজের অবস্থা ও যোগ্যতা অনুযায়ী তা অনুভব করতে সক্ষম হয়। যার মধ্যে ইখলাস, তাকওয়া ও মুজাহাদা যত বেশি হবে, যে যত সতর্কতা ও সাবধানতার সঙ্গে হজের কাজগুলো আঞ্জাম দেবে সে তত বেশি ফায়দা অনুভব করবে। হজ তাকে ততটাই প্রভাবিত করবে। একাধিকবার হজ করলেও প্রতিবারই নতুন নতুন ফায়দা তার অনুভূত হতে থাকবে। প্রতিবারই সে নতুনভাবে প্রভাবিত হবে। ঈমানে ও বিশ্বাসে আগের চেয়ে অধিক সতেজ হয়ে উঠবে।
হজের একটি ফজিলত হলো, হজের মাধ্যমে মানুষ অতীত জীবনের যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ করে। তবে বান্দার হক ব্যতীত। হাদিস শরিফে এসেছে- অর্থ : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং সকল অশ্লীল ও গুনাহর কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে সে সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়।’ (সহীহ বুখারী ১:২০৬)
আর তাই কেউ যদি বান্দার যাবতীয় অনাদায়ী হক আদায় করে হজের সফরে বের হয় এবং সকল বিধিনিষেধ মেনে হজ আদায়ে সক্ষম হয় তাহলে সে সদ্যভূমিষ্ট শিশুর মতোই নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর এ নিষ্পাপ বান্দাটির সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক আরো গভীর হয়। সুতরাং হজের পর দেশে ফিরেও যেন সে গুনাহ ও পঙ্কিলতামুক্ত থাকে, তার বাকিটা জীবন যেন নিষ্পাপ শিশুর মতোই কেটে যায় এ জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি। আর এটিই হবে আল্লাহর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার মূল দাবি ও একজন সাচ্চা আশেকের সতেজ ইশকের বহিঃপ্রকাশ।
দেশে ফিরে করণীয় : হজের সফরের পূর্ণ সময়টা মূলত মানুষের জীবনে তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জনের এক মোক্ষম সময়। এ স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণে একজন মানুষ নিজেকে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তোলে। তাই দেশে ফিরেও যেন সেই তাকওয়া অটুট থাকে সেদিকে লক্ষ রাখা আবশ্যক।
আর হজের সফরের আগে থেকে পেশাগত অথবা অন্য কোনো কারণে কোনো প্রকার গুনাহর কাজে জড়িত থাকলে হজ সফরের পূর্বেই তা থেকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক হয়ে যাওয়া এবং হজের সময়জুড়ে আল্লাহর কাছে বারংবার কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকা জরুরি। আর হজ শেষে দেশে ফিরে সব রকমের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
এ জন্য আল্লাহওয়ালাদের সংস্পর্শে থাকা উচিত। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- অর্থ ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যনিষ্ঠদের সঙ্গে থাক।’ (সূরা তাওবা : ১১৯)। এ আয়াতে প্রথমত, মুমিনদের সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর এই ভয় করার উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর অবাধ্যতা না করা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। তবে যেহেতু আমাদের পরিবেশে গুনাহ থেকে বাঁচা খুবই কঠিন, কেননা, আমাদের চার দিকে শুধু গুনাহ আর গুনাহ। তাই এ পরিবেশে তাকওয়া অবলম্বনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো আল্লাহওয়ালাদের সোহবত ও সাহচর্যে থাকা।
কারণ আল্লাহতাআলা তাকওয়া অবলম্বনের আদেশ দেয়ার পাশাপাশি আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্যে থাকারও নির্দেশ করেছেন। আল কুরআনের একটি নীতি এই যে, যখনই আল্লাহ তাআলা এমন কোনো হুকুম প্রদান করেন, যা পালন করা কষ্টসাধ্য তখন পাশাপাশি অন্য এমন একটি আদেশ প্রদান করে থাকেন যার ওপর আমল করলে প্রথম হুকুমের ওপর আমল করা সহজ হয়ে যায়।
আর তাই আল্লাহওয়ালাদের সাথে থাকা, তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে, তাদের কথা মান্য করা ইত্যাদির মাধ্যমে গুনাহ থেকে সহজেই বেঁচে থাকা সম্ভব। কেননা, মানুষ স্বভাবগতভাবেই পরিবেশের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। ফলে গুনাহর পরিবেশ বর্জন করে নেক ও সৎ লোকদের পরিবেশে নিজেকে অভ্যস্ত করে বাকি জীবন গুনাহমুক্তভাবে কাটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা অপরিহার্য।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী