মসজিদের আদব ও শিষ্টাচার

মসজিদের আদব ও শিষ্টাচার

মসজিদ মুমিন মুসলমানদের নিকট পবিত্রতম স্থান। এবাদত-বন্দেগী করার স্থান, আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন হওয়ার স্থান, একান্তভাবে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের স্থান। এই মসজিদের আদব রক্ষা করা প্রত্যেক ঈমানদারেরই আবশ্যিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, মসজিদের আদব কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।
এর মধ্যে রয়েছে- (ক) মসজিদের তাজিম করা। (খ) মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। (গ) মসজিদে প্রবেশকালে দোয়া পড়া ‘আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা’। অতঃপর দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করা। (ঘ) মসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখা, খুশবুদার রাখা (অর্থাৎ, সুগন্ধিযুক্ত রাখা)। (ঙ) মসজিদে এমন কোনো কাজ করা হতে বিরত থাকা যা মসজিদে ইবাদতকারীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। (চ) মসজিদ থেকে হারানো কোনো বস্তুর ঘোষণা না দেয়া। এ প্রসঙ্গে নবী করিম সা. বলেছেন, কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে তার হারানো বস্তুর ঘোষণা মসজিদ থেকে দিতে শুনতে পায়, তাহলে তার কর্তব্য হলো এ কথা বলা যে, আল্লাহ তোমাকে সে হারানো বস্তু ফিরিয়ে না দিক। কারণ মসজিদ এ জন্য নির্মাণ করা হয়নি। (ছ) মসজিদে কেনা-বেচা না করা। নবী করিম সা. বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে মসজিদে কেনা-বেচা করতে দেখ, তাহলে বলবে- আল্লাহপাক তোমার ব্যবসার বরকত না দিক।’ তিনি মসজিদে কবিতা পাঠ করতে, মসজিদে কাউকে সাজা দিতে এবং মসজিদে হদ কায়েম না করতে অর্থাৎ কোনো হত্যাকারীকে তার হত্যার সাজা স্বরূপ মসজিদের ভেতর হত্যা না করতে বলেছেন।
উপরোল্লিখিত বিষয়াবলির প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায় যে, মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়া নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো, এতে মসজিদে গন্ডগোলের সৃষ্টি হয় এবং এ শোরগোল নামাজীদের, এতেকাফকারীদের, কোরআন তেলাওয়াতকারীদের ও জিকিরকারীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। প্রকৃতপক্ষে মসজিদ এ জন্য নির্মাণ করা হয়নি। মসজিদ শুধুমাত্র আল্লাহর স্মরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
আর মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো এই যে, এতে করে মসজিদ বাজারে পরিণত হয়ে যাবে ও মসজিদের সম্মান ও মর্যাদা নিঃশেষ হয়ে যাবে। অপরদিকে এর দ্বারা নামাজী, এতেকাফকারী, কোরআন তেলাওয়াতকারী, জিকিরকারীদের পেরেশানি হবে। আর মসজিদে কবিতা প্রতিযোগিতা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো, এতে মসজিদে হৈ হুল্লোড়ের সৃষ্টি হবে এবং যে কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে সে নিজে আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত থাকবে এবং অন্যদেরও জিকির হতে গাফেল থাকার সুযোগ এনে দেবে।
অনুরূপভাবে মসজিদে কেসাস কায়েম করা ও অপরাধীকে শাস্তি দিতে নিষেধ করার কারণ হলো, এতে মসজিদ নোংরা হবে, অপবিত্র হবে। অথবা অপরাধীর চিৎকারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এমনকি এতে মসজিদে অবস্থানরত লোকদের সমস্যার সৃষ্টি করবে।
তবে মসজিদে যদি এমন কবিতা পাঠ করা হয় যাতে ‘হামদ’ ও ‘না’ত’ আছে এবং কাফেরদের অসন্তুষ্টি হওয়ার কারণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তাহলে এরূপ কবিতা পাঠ করা বৈধ। কারণ এটি একটি শরীয়তসম্মত কাজ। এতদসম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, হাসানকে হযরত জিব্রাঈল দ্বারা সাহায্য করুন।’
আর মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করার বিধান এ জন্য দেয়া হযেছে যে, এই স্থানটি নামাজ এবং এবাদতের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রবেশ করে নামাজ না পড়া সওয়াব লাভ হতে বঞ্চিত হওয়ার পরিচায়ক। পক্ষান্তরে দু’রাকাত নামাজ আদায় করলে ফরজ আদায়ের আগ্রহ অধিক হারে বৃদ্ধি পায়। কোনো ঋতুবতী নারী ও অপবিত্র পুরুষের মসজিদে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আমি মসজিদকে কোনো ঋতুবতী নারী ও অপবিত্র পুরুষের জন্য হালাল করব না।’ এতে মসজিদের সম্মান, মর্যাদা ও পবিত্রতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোনো দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু ভক্ষণ করে মসজিদে গমন না করা। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুর্গন্ধযুক্ত বৃক্ষ বা ফল ভক্ষণ করবে, যে যেন কখনো আমাদের কোনো মসজিদের নিকট না আসে। নিশ্চয়ই যে বস্তু মানুষকে কষ্ট দেয়, তা ফিরিশতাদেরও কষ্ট দেয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী