হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা
হাজরে আসওয়াদ হলো একটি কালো রঙের প্রাচীন পাথর। যা কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মাতাফ থেকে দেড় মিটার (চার ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। কাবাঘর তওয়াফ এবং প্রদক্ষিণের সময় ওই পাথর স্পর্শ করা ও চুম্বন করা সুন্নত। মুসলিম নর-নারীর কাছে এ পাথর অতি মূল্যবান।
তিরমিজি শরিফের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হাজরে আসওয়াদ (হজরত আদম (আ•)-এর সঙ্গে) জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়। তখন তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল; কিন্তু আদম সন্তানের গুনাহ একে কালো করে দিয়েছে।
বায়তুল্লাহ তওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের বিধান থাকলেও ভীড় ঠেলে, ভীষণ কষ্ট স্বীকার করে এটা করতেই হবে- বিষয়টি এমন নয়। যদি চুম্বন দেওয়া সম্ভব না হয়- তাহলে ডান হাত দিয়ে ইশারা করলেও হবে। অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত সম্প্রসারিত করে স্বীয় হস্তে চুম্বন করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং আল্লাহতায়ালা হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের বরকত দান করবেন।
হাজরে আসওয়াদের ফজিলত প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘এই দুটি রোকন (হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানি) স্পর্শ করা গুনাহগুলোকে মুছে দেয়।’ –
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন সম্পর্কে রাসূল সা. এর বাণী এবং সাহাবাগণের আমলের বর্ণনা নির্ভরযোগ্য হাদীসের গ্রন্থগুলোতে ভরপুর।
১.রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- কিয়ামতের দিন এ পাথরটি ‘আবু কুবাইস’ পাহাড় থেকে বড় আকার ধারণ করে উপস্থিত হবে। তার একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট থাকবে, (বায়তুল্লাহর যিয়ারতকারীরা) কে কোন নিয়তে তাকে চুম্বন করেছে, সে সম্পর্কে বক্তব্য দিবে। আর ইট আল্লাহর ডান হাত যদ্বারা তিনি তার বান্দার সাথে মুসাফাহা করেন।” [সহীহ ইবনে খুযায়মা : ৪/২২১, মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৪৫৭]
২. আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা.কে হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেন, আমি রাসূল সা.কে তা স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি।” [সহীহ মুসলিম : হা. ১২৬৭]
৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- তোমরা এই পাথরটি বেশি বেশি করে চুম্বন করো। কারণ তোমরা হয়তো অচিরেই তাকে হারিয়ে ফেলবে। এমন একসময় আসবে লোকেরা রাতের বেলায় তাকে চুম্বন করে সকাল থেকে তাকে আর দেখতে পাবে না। কারণ, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে দুনিয়াতে অবস্থিত জান্নাতি সকল বস্তু স্ব-স্থানে ফিরিয়ে দিবেন। [আখবারু মক্কা, আযরুকী : ১/৩৪২-৩৪৩]
৪. ওমর বিন খাত্তাব রা. একদা হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার পর বললেন, আমি জানি তুমি পাথর মাত্র। উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা তোমার নেই। তারপরও আমি যদি তোমাকে আমার প্রিয় হাবীব রাসূল সা. চুম্বন করতে না দেখতাম, তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন- “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে।” [আল-আহযাব : ২১]
এসময় উবাই বিন কাব রা. বলে উঠলেন, নিশ্চয় তা উপকার ও ক্ষতি উভয়ই করতে পারে। আর কিয়ামতের দিন তো এটি বাকপটু জিহ্বা নিয়ে উঠবে। এবং তাকে যারা চুম্বন ও স্পর্শ করেছে, তাদের ব্যাপারে সে সাক্ষ্য দিবে। ঠিক সে মুহূর্তে আলী বিন আবি তালিব রা. তাঁকে সমর্থন জানিয়ে বললেন, হ্যাঁ, আমীরুল মুমিনীন! নিশ্চয় তা উপকার ও ক্ষতি সাধন করতে পারে। এ ছাড়াও আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি- কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে উপস্থিত করা হবে। তার একটি জিহ্বা থাকবে যাদ্বারা সে তাকে চুম্বনকারী সকল মুসলমানদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এসব কথা শ্রবণান্তে ওমর রা. বললেন, সে জাতির জীবন যাত্রার মাঝে কোন কল্যাণ নেই। যাদের মাঝে আবুল হাসান তথা আলীর রা. উপস্থিতি নেই। [আল-জামে আল-লতিফ ফী ফাযলে মক্কা ওয়া আহলুহা ওয়া বিনাউল বাইতিশ শরীফ : পৃ. ৩৫]
এসময় উবাই বিন কাব রা. বলে উঠলেন, নিশ্চয় তা উপকার ও ক্ষতি উভয়ই করতে পারে। আর কিয়ামতের দিন তো এটি বাকপটু জিহ্বা নিয়ে উঠবে। এবং তাকে যারা চুম্বন ও স্পর্শ করেছে, তাদের ব্যাপারে সে সাক্ষ্য দিবে। ঠিক সে মুহূর্তে আলী বিন আবি তালিব রা. তাঁকে সমর্থন জানিয়ে বললেন, হ্যাঁ, আমীরুল মুমিনীন! নিশ্চয় তা উপকার ও ক্ষতি সাধন করতে পারে। এ ছাড়াও আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি- কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে উপস্থিত করা হবে। তার একটি জিহ্বা থাকবে যাদ্বারা সে তাকে চুম্বনকারী সকল মুসলমানদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এসব কথা শ্রবণান্তে ওমর রা. বললেন, সে জাতির জীবন যাত্রার মাঝে কোন কল্যাণ নেই। যাদের মাঝে আবুল হাসান তথা আলীর রা. উপস্থিতি নেই। [আল-জামে আল-লতিফ ফী ফাযলে মক্কা ওয়া আহলুহা ওয়া বিনাউল বাইতিশ শরীফ : পৃ. ৩৫]
৫. হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- নিশ্চয় এ পাথরটির একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট রয়েছে। সে তার চুম্বনকারীদের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন সত্য সাক্ষ্য দেবে। [সহীহ ইবনে হিব্বান : ৯/১২, সহীহ ইবনে খুযায়মা : ৪/২২১]
৬. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, পৃথিবীতে দুটি বস্তু এমন রয়েছে যা জান্নাতের অংশ। এক. হাজরে আসওয়াদ, দুই. মাকামে ইবরাহীম। মর্যাদার দিক থেকে ‘আবু কুবাইস’ পাহাড় পরিমাণ উঁচু। উভয়েরই দুটি চোখ ও দুটি ঠোঁট রয়েছে। এবং উভয়েই তাদের পূর্ণসম্মান দাতাগণের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে।” [আদ-দুররুল মানশুর, সুয়ূতী : ১/১১৯]
৭. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আরো বলেন যে, নবী সা. বিদায় হজ্জে একটি উটের ওপর সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেছেন। এবং সে সময় তিনি একটি বাঁকা মাথা ওয়ালা লাঠি দ্বারা হাজরে আসওয়াদকে (ইশারা করে চুম্বন করেছেন।” [ফাতহুলবারী : ৩/৫৩৬ হা. ১৬০৭]
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায় যে, কেউ যদি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে সক্ষম না হয়, হাত দ্বারা তাকে স্পর্শ করতে সক্ষম হয়, তাহলে সে হাতকেই চুম্বন করবে এবং চেহারায় হাত বুলাবে। কারণ, আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রা. যখন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি তাঁর চেহারায় উপর-নিচ করে হাত বুলাতেন। [আখবারু মক্কা : ১/১০৬]
হাজরে আসওয়াদের কিছু অজানা ঘটনা প্রবাহ
হাজরে আসওয়াদের কিছু অজানা ঘটনা প্রবাহ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন