হযরত ইউসুফ (আঃ)
بسم الله الرحمن الرحيم হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর কাহিনী
لَّقَدْ كَانَ فِي يُوسُفَ وَإِخْوَتِهِ آيَاتٌ لِّلسَّائِلِينَ ﴿٧﴾ إِذْ قَالُوا لَيُوسُفُ وَأَخُوهُ أَحَبُّ إِلَىٰ أَبِينَا مِنَّا وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّ أَبَانَا لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ ﴿٨﴾ اقْتُلُوا يُوسُفَ أَوِ اطْرَحُوهُ أَرْضًا يَخْلُ لَكُمْ وَجْهُ أَبِيكُمْ
وَتَكُونُوا مِن بَعْدِهِ قَوْمًا صَالِحِينَ ﴿٩﴾ قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ لَا تَقْتُلُوا يُوسُفَ وَأَلْقُوهُ فِي غَيَابَتِ الْجُبِّ يَلْتَقِطْهُ بَعْضُ السَّيَّارَةِ إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ ﴿١٠
তরজমাঃ “ইউসুফ(আ:)ও তাঁর ভাইদের কাহিনীতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে জিজ্ঞাসুদের জন্য; যখন তারা বললো- অবশ্যই ইউসুফ ও তার ভাই আমাদের পিতার কাছে আমাদের চাইতে অধিক প্রিয়, অথচ আমরা একটি সংহত দল। নিশ্চয় আমাদের পিতা প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে রয়েছেন। হয়তো ইউসুফকে হত্যা কর কিংবা তাকে ফেলে রেখে আস অন্য কোন স্থানে। তাহলে তোমাদের পিতার স্নেহ দৃষ্টি শুধু তোমাদের প্রতিই নিবিষ্ট হবে এবং এরপর তোমরা (তওবা করে) ভাল মানুষ হয়ে যাবে। তাদের মধ্য থেকে একজন বললো- তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো না, বরং যদি তোমরা কিছু করতেই চাও, তাহলে তাকে কোন কূপের গভীরে নিক্ষেপ কর, যাতে কোন পথিক তাকে তুলে নিয়ে যায়।”
(সূরাহ ইউসুফ, আয়াত: ৭-১০)
তাফসীরঃ উল্লেখিত আয়াতসমূহে হযরত ইউসুফ (আঃ) ও তাঁর ভাইদের কথা আলোচনা করা হয়েছে। হযরত ইউসুফসহ হযরত ইয়াকূব (আঃ)- এর বারজন পুত্র সন্তান ছিলেন। তাদের প্রত্যেকেরই অনেক সন্তান- সন্ততি হয় এবং বংশ বিস্তার লাভ করে।
হযরত ইয়াকূব (আঃ)- এর উপাধি ছিল ইসরাঈল। তাই সেই বারটি পরিবার সবাই ‘বনী ইসরাঈল’ নামে খ্যাত হয়।
বার পুত্রের মধ্যে দশজন জ্যেষ্ঠপুত্র হযরত ইয়াকূব (আঃ)- এর প্রথমা স্ত্রী লাইয়্যা বিনতে লাইয়্যানের গর্ভে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ইয়াকূব (আঃ) লাইয়্যার ভগিণী রাহীলকে বিবাহ করেন। রাহীলের গর্ভে দুই ছেলে ইউসুফ ও বিনয়ামীন জন্মগ্রহণ করেন।
তাই হযরত ইউসুফ (আঃ)- এর একমাত্র সহোদর ভাই ছিলেন বিনয়ামীন এবং অবশিষ্ট দশজন বৈমাত্রেয় ভাই। এরপর ইউসুফ (আঃ)- এর জননী রাহীলও বিনয়ামীন- এর জন্মের সময় মৃত্যুমুখে পতিত হন। (আল-জামি‘লি আহকামিল কুরআন লিল কুরতুবী)
হযরত ইউসুফ (আঃ) শৈশবে স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, এগারটি নক্ষত্র এবং সূর্য ও চন্দ্র তাকে সিজদা করছে। এই অভিনব স্বপ্ন দেখে পিতার নিকট ব্যক্ত করলে তিনি নবী সুলভ দূরদর্শীতা দ্বারা বুঝতে পারলেন যে, ইউসুফের জন্য ভবিষ্যতে মহা মর্যাদা অপেক্ষা করছে। এমনকি সে নবীও হতে পারে। তাই তিনি তাকে আরো অধিক স্নেহ করতে লাগলেন এবং তার এই সৌভাগ্যের সংবাদ অবহিত হয়ে অন্যান্য ভায়েরা তার প্রতি আরো ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠতে পারে এবং তাকে কষ্ট দেয়ার পরিকল্পনা করতে পারে। তাই তিনি ইউসুফকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন যে, তোমার ভাইদের নিকট এই স্বপ্ন বৃত্তান্ত মোটেও বর্ণনা কর না, তাহলে তোমার বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবে। কেননা শয়তান তো মানুষের চিরশত্রু। সে চায় না ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্ক থাকুক, শান্তিতে বসবাস করুক। কিন্তু মানুষ যেটা আশঙ্কা করে সেটাই হয়ে থাকে।
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বৈমাত্রেয় ভ্রাতারা দেখলো যে, পিতা ইয়াকূব (আঃ) ইউসুফের প্রতি অসাধারণ মুহাব্বত রাখেন। ফলে তাদের মনে হিংসা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এটাও সম্ভবপর যে, তারা কোনরূপে ইউসুফ (আঃ)- এর স্বপ্নের বিষয়ও অবগত হয়েছিল, যদ্দরুণ তারা হযরত ইউসুফ (আঃ)- এর বিরাট মাহাত্ন্যর কথা টের পেয়ে তাঁর প্রতি হিংসা পরায়ণ হয়ে উঠলো।
তখন তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো যে, আব্বাজান দেখি আমাদের তুলনায় ইউসুফ ও তার অনুজ বিনয়ামীনকে অধিক ভালবাসেন। অথচ আমরা দশজন তাদের জ্যেষ্ঠ হওয়ার কারনে গৃহের কাজ-কর্ম করতে সক্ষম। তারা উভয়েই ছোট বালক বিধায় গৃহস্থালীর কাজ করার শক্তি রাখে না। আমাদের পিতার উচিত হলো- বিষয়টি অনুধাবন করা এবং আমাদেরকে অধিক মুহাব্বত করা। কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে অবিচার করে যাচ্ছেন। তাই এসো- আমরা হয় ইউসুফকে হত্যা করি, না হয় তাকে এমন দূরদেশে নির্বাসিত করি, যেখান থেকে সে আর ফিরে আসতে না পারে।
পরামর্শের এক পর্যায়ে তাদের একজন এ মত প্রকাশ করলো যে, ইউসুফকে হত্যা করা হোক। অন্য একজন বললো- তাকে হত্যা না করে কোন দূরদেশে ফেলে আসা হোক। এতে করে মাঝখান থেকে এ কন্টক দূর হয়ে যাবে এবং পিতার সমগ্র মনযোগ আমাদের প্রতিই নিবদ্ধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তাকে হত্যা কিংবা দেশান্তরের কারনে যে গুণাহ হবে, তার প্রতিকার এই যে, পরবর্তীকালে তাওবা করে আমরা ভালো হয়ে যাবো। শিরোনামে উল্লিখিত ‘এবং তারপর ভালো হয়ে যাবো’ বাক্যের এক অর্থ তা-ই বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া এরূপ অর্থও হতে পারে যে, ইউসুফকে হত্যা করার পর আমাদের অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। কেননা, তখন পিতার মনোযোগের কেন্দ্র শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং মনোযোগ আমাদের দিকেই নিবদ্ধ হবে এবং আমরা ভালো পরিগণিত হবো।
সেই মুহূর্তে তাদের মধ্যেরই একজন সমস্ত কথাবার্তা শুনে বললো- ইউসুফকে হত্যা করা উচিত হবে না। বরং যদি কিছু করতেই হয়, তবে তাকে কূপের গভীরে এমন জায়গায় নিক্ষেপ করা হোক, যেখানে সে জীবিত থাকবে এবং পথিকরা যখন কূপে আসবে, তখন তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। এভাবে একদিকে তোমাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাবে এবং চিন্তা করতে হবে না। বরং এমতাবস্থায় কোন পথিকই তাকে দূরদেশে নিয়ে চলে যাবে।
এ অভিমত প্রকাশকারী ছিলো তাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ইয়াহুদা। কোন কোন রিওয়ায়াতে আছে যে, সবার মধ্যে রুবিল ছিলো জ্যেষ্ঠ। সে-ই এ অভিমত ব্যক্ত করেছিলো। এ ব্যাক্তি সম্পর্কেই সামনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মিসরে যখন ইউসুফ (আঃ)- এর ছোট ভাই বিনয়ামীনকে আটক করা হয়, তখন সে বলেছিলো- আমি ফিরে গিয়ে পিতাকে কীভাবে মুখ দেখাবো? তাই আমি আর কেনানে ফিরে যাবো না।
হযরত ইউসুফ (আঃ)- এর ভাইয়েরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পিতার কাছে এভাবে আবেদন পেশ করলো যে, আব্বাজান! ব্যাপার কী! আপনি দেখি ইউসুফ সম্পর্কে আমাদের প্রতি আস্থা রাখেন না! অথচ আমরা তার পুরোপুরি হিতাকাঙ্ক্ষী। আগামীকাল আপনি তাকে আমাদের সাথে ভ্রমণে পাঠিয়ে দিন, যাতে সেও স্বাধীনভাবে পানাহার ও খেলাধুলা করতে পারে। আমরা সবাই তার পুরোপুরি দেখাশোনা করব।
তাদের এ আবেদন থেকেই বোঝা যায় যে, ইতিপূর্বেও তারা কোন সময় এ ধরনের আবেদন করেছিল, যা পিতা অগ্রাহ্য করেছিলেন। যদ্দরুণ এবার কিঞ্চিত জোর ও পীড়াপীড়ি সহকারে পিতাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে তাদের এ আবেদন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
قَالُوا يَا أَبَانَا مَا لَكَ لَا تَأْمَنَّا عَلَىٰ يُوسُفَ وَإِنَّا لَهُ لَنَاصِحُونَ ﴿١١﴾ أَرْسِلْهُ مَعَنَا غَدًا يَرْتَعْ وَيَلْعَبْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ ﴿١٢﴾
“তারা বললো- হে আমাদের আব্বা! আপনার কী হয়েছে যে, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদেরকে বিশ্বাস করেন না? অথচ আমরা তো তার শুভাকাঙ্ক্ষী। আগামীকাল তাকে আমাদের সাথে প্রেরণ করুণ। তাহলে সে তৃপ্তিসহ খাবে এবং খেলাধুলা করবে, আর আমরা অবশ্যই তার হিফাযত করবো।”(সূরাহ ইউসুফ, আয়াতঃ ১১-১২)
ইউসুফ (আঃ)- এর ভ্রাতারা যখন আগামীকাল ইউসুফকে তাদের সাথে ভ্রমণে পাঠানোর আবেদন করলো, তখন হযরত ইয়াকূব (আঃ) বললেন- তাকে পাঠানো আমি দু‘কারণে পছন্দ করি না। প্রথমতঃ এ নয়নের মণি আমার সামনে না থাকলে, আমি শান্তি পাই না। দ্বিতীয়তঃ আমার আশঙ্কা হচ্ছে যে, জঙ্গলে তোমাদের অসাবধানতার মুহূর্তে তাকে বাঘে খেয়ে ফেলতে পারে।
لَّقَدْ كَانَ فِي يُوسُفَ وَإِخْوَتِهِ آيَاتٌ لِّلسَّائِلِينَ ﴿٧﴾ إِذْ قَالُوا لَيُوسُفُ وَأَخُوهُ أَحَبُّ إِلَىٰ أَبِينَا مِنَّا وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّ أَبَانَا لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ ﴿٨﴾ اقْتُلُوا يُوسُفَ أَوِ اطْرَحُوهُ أَرْضًا يَخْلُ لَكُمْ وَجْهُ أَبِيكُمْ
وَتَكُونُوا مِن بَعْدِهِ قَوْمًا صَالِحِينَ ﴿٩﴾ قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ لَا تَقْتُلُوا يُوسُفَ وَأَلْقُوهُ فِي غَيَابَتِ الْجُبِّ يَلْتَقِطْهُ بَعْضُ السَّيَّارَةِ إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ ﴿١٠
তরজমাঃ “ইউসুফ(আ:)ও তাঁর ভাইদের কাহিনীতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে জিজ্ঞাসুদের জন্য; যখন তারা বললো- অবশ্যই ইউসুফ ও তার ভাই আমাদের পিতার কাছে আমাদের চাইতে অধিক প্রিয়, অথচ আমরা একটি সংহত দল। নিশ্চয় আমাদের পিতা প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে রয়েছেন। হয়তো ইউসুফকে হত্যা কর কিংবা তাকে ফেলে রেখে আস অন্য কোন স্থানে। তাহলে তোমাদের পিতার স্নেহ দৃষ্টি শুধু তোমাদের প্রতিই নিবিষ্ট হবে এবং এরপর তোমরা (তওবা করে) ভাল মানুষ হয়ে যাবে। তাদের মধ্য থেকে একজন বললো- তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো না, বরং যদি তোমরা কিছু করতেই চাও, তাহলে তাকে কোন কূপের গভীরে নিক্ষেপ কর, যাতে কোন পথিক তাকে তুলে নিয়ে যায়।”
(সূরাহ ইউসুফ, আয়াত: ৭-১০)
তাফসীরঃ উল্লেখিত আয়াতসমূহে হযরত ইউসুফ (আঃ) ও তাঁর ভাইদের কথা আলোচনা করা হয়েছে। হযরত ইউসুফসহ হযরত ইয়াকূব (আঃ)- এর বারজন পুত্র সন্তান ছিলেন। তাদের প্রত্যেকেরই অনেক সন্তান- সন্ততি হয় এবং বংশ বিস্তার লাভ করে।
হযরত ইয়াকূব (আঃ)- এর উপাধি ছিল ইসরাঈল। তাই সেই বারটি পরিবার সবাই ‘বনী ইসরাঈল’ নামে খ্যাত হয়।
বার পুত্রের মধ্যে দশজন জ্যেষ্ঠপুত্র হযরত ইয়াকূব (আঃ)- এর প্রথমা স্ত্রী লাইয়্যা বিনতে লাইয়্যানের গর্ভে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ইয়াকূব (আঃ) লাইয়্যার ভগিণী রাহীলকে বিবাহ করেন। রাহীলের গর্ভে দুই ছেলে ইউসুফ ও বিনয়ামীন জন্মগ্রহণ করেন।
তাই হযরত ইউসুফ (আঃ)- এর একমাত্র সহোদর ভাই ছিলেন বিনয়ামীন এবং অবশিষ্ট দশজন বৈমাত্রেয় ভাই। এরপর ইউসুফ (আঃ)- এর জননী রাহীলও বিনয়ামীন- এর জন্মের সময় মৃত্যুমুখে পতিত হন। (আল-জামি‘লি আহকামিল কুরআন লিল কুরতুবী)
হযরত ইউসুফ (আঃ) শৈশবে স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, এগারটি নক্ষত্র এবং সূর্য ও চন্দ্র তাকে সিজদা করছে। এই অভিনব স্বপ্ন দেখে পিতার নিকট ব্যক্ত করলে তিনি নবী সুলভ দূরদর্শীতা দ্বারা বুঝতে পারলেন যে, ইউসুফের জন্য ভবিষ্যতে মহা মর্যাদা অপেক্ষা করছে। এমনকি সে নবীও হতে পারে। তাই তিনি তাকে আরো অধিক স্নেহ করতে লাগলেন এবং তার এই সৌভাগ্যের সংবাদ অবহিত হয়ে অন্যান্য ভায়েরা তার প্রতি আরো ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠতে পারে এবং তাকে কষ্ট দেয়ার পরিকল্পনা করতে পারে। তাই তিনি ইউসুফকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন যে, তোমার ভাইদের নিকট এই স্বপ্ন বৃত্তান্ত মোটেও বর্ণনা কর না, তাহলে তোমার বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবে। কেননা শয়তান তো মানুষের চিরশত্রু। সে চায় না ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্ক থাকুক, শান্তিতে বসবাস করুক। কিন্তু মানুষ যেটা আশঙ্কা করে সেটাই হয়ে থাকে।
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বৈমাত্রেয় ভ্রাতারা দেখলো যে, পিতা ইয়াকূব (আঃ) ইউসুফের প্রতি অসাধারণ মুহাব্বত রাখেন। ফলে তাদের মনে হিংসা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এটাও সম্ভবপর যে, তারা কোনরূপে ইউসুফ (আঃ)- এর স্বপ্নের বিষয়ও অবগত হয়েছিল, যদ্দরুণ তারা হযরত ইউসুফ (আঃ)- এর বিরাট মাহাত্ন্যর কথা টের পেয়ে তাঁর প্রতি হিংসা পরায়ণ হয়ে উঠলো।
তখন তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো যে, আব্বাজান দেখি আমাদের তুলনায় ইউসুফ ও তার অনুজ বিনয়ামীনকে অধিক ভালবাসেন। অথচ আমরা দশজন তাদের জ্যেষ্ঠ হওয়ার কারনে গৃহের কাজ-কর্ম করতে সক্ষম। তারা উভয়েই ছোট বালক বিধায় গৃহস্থালীর কাজ করার শক্তি রাখে না। আমাদের পিতার উচিত হলো- বিষয়টি অনুধাবন করা এবং আমাদেরকে অধিক মুহাব্বত করা। কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে অবিচার করে যাচ্ছেন। তাই এসো- আমরা হয় ইউসুফকে হত্যা করি, না হয় তাকে এমন দূরদেশে নির্বাসিত করি, যেখান থেকে সে আর ফিরে আসতে না পারে।
পরামর্শের এক পর্যায়ে তাদের একজন এ মত প্রকাশ করলো যে, ইউসুফকে হত্যা করা হোক। অন্য একজন বললো- তাকে হত্যা না করে কোন দূরদেশে ফেলে আসা হোক। এতে করে মাঝখান থেকে এ কন্টক দূর হয়ে যাবে এবং পিতার সমগ্র মনযোগ আমাদের প্রতিই নিবদ্ধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তাকে হত্যা কিংবা দেশান্তরের কারনে যে গুণাহ হবে, তার প্রতিকার এই যে, পরবর্তীকালে তাওবা করে আমরা ভালো হয়ে যাবো। শিরোনামে উল্লিখিত ‘এবং তারপর ভালো হয়ে যাবো’ বাক্যের এক অর্থ তা-ই বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া এরূপ অর্থও হতে পারে যে, ইউসুফকে হত্যা করার পর আমাদের অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। কেননা, তখন পিতার মনোযোগের কেন্দ্র শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং মনোযোগ আমাদের দিকেই নিবদ্ধ হবে এবং আমরা ভালো পরিগণিত হবো।
সেই মুহূর্তে তাদের মধ্যেরই একজন সমস্ত কথাবার্তা শুনে বললো- ইউসুফকে হত্যা করা উচিত হবে না। বরং যদি কিছু করতেই হয়, তবে তাকে কূপের গভীরে এমন জায়গায় নিক্ষেপ করা হোক, যেখানে সে জীবিত থাকবে এবং পথিকরা যখন কূপে আসবে, তখন তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। এভাবে একদিকে তোমাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাবে এবং চিন্তা করতে হবে না। বরং এমতাবস্থায় কোন পথিকই তাকে দূরদেশে নিয়ে চলে যাবে।
এ অভিমত প্রকাশকারী ছিলো তাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ইয়াহুদা। কোন কোন রিওয়ায়াতে আছে যে, সবার মধ্যে রুবিল ছিলো জ্যেষ্ঠ। সে-ই এ অভিমত ব্যক্ত করেছিলো। এ ব্যাক্তি সম্পর্কেই সামনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মিসরে যখন ইউসুফ (আঃ)- এর ছোট ভাই বিনয়ামীনকে আটক করা হয়, তখন সে বলেছিলো- আমি ফিরে গিয়ে পিতাকে কীভাবে মুখ দেখাবো? তাই আমি আর কেনানে ফিরে যাবো না।
হযরত ইউসুফ (আঃ)- এর ভাইয়েরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পিতার কাছে এভাবে আবেদন পেশ করলো যে, আব্বাজান! ব্যাপার কী! আপনি দেখি ইউসুফ সম্পর্কে আমাদের প্রতি আস্থা রাখেন না! অথচ আমরা তার পুরোপুরি হিতাকাঙ্ক্ষী। আগামীকাল আপনি তাকে আমাদের সাথে ভ্রমণে পাঠিয়ে দিন, যাতে সেও স্বাধীনভাবে পানাহার ও খেলাধুলা করতে পারে। আমরা সবাই তার পুরোপুরি দেখাশোনা করব।
তাদের এ আবেদন থেকেই বোঝা যায় যে, ইতিপূর্বেও তারা কোন সময় এ ধরনের আবেদন করেছিল, যা পিতা অগ্রাহ্য করেছিলেন। যদ্দরুণ এবার কিঞ্চিত জোর ও পীড়াপীড়ি সহকারে পিতাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে তাদের এ আবেদন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
قَالُوا يَا أَبَانَا مَا لَكَ لَا تَأْمَنَّا عَلَىٰ يُوسُفَ وَإِنَّا لَهُ لَنَاصِحُونَ ﴿١١﴾ أَرْسِلْهُ مَعَنَا غَدًا يَرْتَعْ وَيَلْعَبْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ ﴿١٢﴾
“তারা বললো- হে আমাদের আব্বা! আপনার কী হয়েছে যে, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদেরকে বিশ্বাস করেন না? অথচ আমরা তো তার শুভাকাঙ্ক্ষী। আগামীকাল তাকে আমাদের সাথে প্রেরণ করুণ। তাহলে সে তৃপ্তিসহ খাবে এবং খেলাধুলা করবে, আর আমরা অবশ্যই তার হিফাযত করবো।”(সূরাহ ইউসুফ, আয়াতঃ ১১-১২)
ইউসুফ (আঃ)- এর ভ্রাতারা যখন আগামীকাল ইউসুফকে তাদের সাথে ভ্রমণে পাঠানোর আবেদন করলো, তখন হযরত ইয়াকূব (আঃ) বললেন- তাকে পাঠানো আমি দু‘কারণে পছন্দ করি না। প্রথমতঃ এ নয়নের মণি আমার সামনে না থাকলে, আমি শান্তি পাই না। দ্বিতীয়তঃ আমার আশঙ্কা হচ্ছে যে, জঙ্গলে তোমাদের অসাবধানতার মুহূর্তে তাকে বাঘে খেয়ে ফেলতে পারে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন