সিয়াম সাধনার মাস- মাহে রমজান


স্বাগতম মাহে রমজান। প্রতি বছরের ন্যায় আবারও আমাদের মাঝে ফিরে এলো পবিত্র রমজানুল মোবারক। পবিত্র রমজান মাস নিঃসন্দেহের অন্যান্য মাসসমূহ থেকে পৃথকভাবে মাহাত্ম্যের দাবি রাখে। বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তির সনদ সর্বযুগের সর্বদেশের সর্বজাতি সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থার অপরিবর্তনীয় গ্রন্থ আল কোরআন। যে মাসে নাযিল করা হয় সে মাসের পবিত্রতা, মাহাত্ম্য মহিমা নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। আরবী মাসসমূহের এইরমজান পরম করণাময় আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেন আসমানী কিতাবসমূহের সর্বশেষ গ্রন্থ আল কোরআন। কোরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে এরশাদ করেন, ‘রমজান এমন এক মহিমাময় গৌরবাম-িত মাস যে মাসে (আল্লাহতায়ালার পাক কালাম) কোরআন শরীফ নাযিল হয়েছে। শুধু কোরআন শরীফই নয়, পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থসমূহ সহীফাগুলো এই পবিত্র রমজান মাসে নাযিল করা হয়। রমজান মাসের পহেলা (কিংবা ৩রা তারিখে) হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সহীফা লাভ করেন, তারিখে হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে পবিত্রতাওরাতপৌঁছায়। হযরত দাউদ (আঃ)-এর কাছে পবিত্র যাবুর নাযিল হয় এই পবিত্র মাসের ১৮ তারিখে, আর হযরত ঈসা (আঃ)-এর পবিত্রইনজিললাভ করেন এই মাসের ১২ তারিখে। থেকে সহজেই পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব, পবিত্রতা মাহাত্ম্য বোঝা যায়।রোজাএকটি ফারসী শব্দ, আরবী ভাষায় রোজাকেসিয়ামবলা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা সংযম করাকে রোজা বলে।সিয়ামশব্দেরও একই অর্থ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হল সিয়াম বা রোজা। অবশ্য শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা বাউপবাসব্রত বললেসিয়ামএর সঠিক রূপ প্রকাশ পায় না।উপবাস ব্রতপৃথিবীর সকল ধর্মেই রয়েছে। তবে সুদীর্ঘ একমাসব্যাপী ভোর (সোবহে সাদেক) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস এবং সেই সঙ্গে কঠোর সংযম সাধনার বিধান ইসলাম ছাড়া পৃথিবীতে আর অন্য কোন ধর্মে নেই।রমজশব্দ থেকে এসেছেরমজানরমজশব্দের অর্থ হল জ্বালিয়ে দেয়া, দগ্ধ করা। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষের মনের কলুষ-কালিমা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়ে মনকে নির্মল পবিত্র করে তোলে, পাপ রাশিকে সম্পূর্ণ রূপে দগ্ধ করে দিয়ে মানুষকে করে তোলে পুণ্যবান, যোগ্য করে তোলে সাধারণ মানুষকে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার অসাধারণ করুণা ক্ষমা গ্রহণ করার জন্য। স্বভাবতই নামাজের পরেই মুসলমানের জন্য আল্লাহতায়ালা যে এবাদত ফরজ করেছেন তা হল পবিত্র রমজান মাসের রোজা। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ-তায়ালা এরশাদ করেন। হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমােেদর পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল। আশা যে, তোমরা মুত্তাকী হবে।’’ এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যত শরীয়ত দুনিয়ায় নাজিল হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই রোজা রাখার বিধি- ব্যবস্থা ছিল। নামাজের মত এই রোজাকেও আবহমানকাল থেকেই সকল নবীর শরীয়তেই ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র রমজানের রোজা তিনটি ভাগে বিভক্তরহমত’ ‘মাগফেরাতনাজাত প্রথম দশদিন পরম করুণাময় আল্লাহ-তায়ালার অসীম রহমত ঝরে পড়তে থাকে। পৃথিবীর উপরে, তার রোজাদার মোমেন বান্দাদের উপরে। দ্বিতীয় দশদিনে পাওয়া যায়মাগফেরাতবা ক্ষমা-অন্যায় কাজ চিন্তার জন্য ক্ষমা, পাপাচার চারিত্রিক নোংরামির জন্য ক্ষমা। শেষ দশদিনে পাওয়া যায় মুক্তি-দোজখের শাস্তি থেকে মুক্তি, পাপ থেকে মুক্তি, যৌন-ক্ষুধা থেকে মুক্তি, কামনা থেকে মুক্তি, অশ্লীলতা থেকে মুক্তি, লোভ-লালসা থেকে মুক্তি, সকল প্রকারের অযৌক্তিক বন্ধন থেকে মুক্তি, সকল অশুভ কার্যকলাপ অন্যায় থেকে মুক্তি। আর এই মুক্তির জন্যএতেকাফের সাধনা। মাহে রমজানের এই রোজার মাধ্যমে সংযম সাধনার ফলে মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় পরম করুণাময়ের নৈকট্য লাভ করার। কারণ, রমজানেরসিয়ামমানুষের মনের রিপুগুলোকে সংযত করে, দীন-দরিদ্র ক্ষুধার্তদের কষ্ট যন্ত্রণা ব্যথা বেদনা হৃদয়ঙ্গম করতে সাহায্য করে, মানুষকে ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। দয়াল নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেনআমি সেই মহান আল্লাহর কসম করিয়া বলিতেছি, যাঁহার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় জানিও আল্লাহর নিকট রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশক বা কস্তুরিরচেয়ে অধিক সুগন্ধি বলিয়া বিবেচিত





স্বাগতম মাহে রমজান। প্রতি বছরের ন্যায় আবারও আমাদের মাঝে ফিরে এলো পবিত্র রমজানুল মোবারক। পবিত্র রমজান মাস নিঃসন্দেহের অন্যান্য মাসসমূহ থেকে পৃথকভাবে মাহাত্ম্যের দাবি রাখে। বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তির সনদ সর্বযুগের সর্বদেশের সর্বজাতি সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থার অপরিবর্তনীয় গ্রন্থ আল কোরআন। যে মাসে নাযিল করা হয় সে মাসের পবিত্রতা, মাহাত্ম্য ও মহিমা নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। আরবী মাসসমূহের এই ‘রমজান’ এ পরম করণাময় আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেন আসমানী কিতাবসমূহের সর্বশেষ গ্রন্থ আল কোরআন। কোরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে এরশাদ করেন, ‘রমজান এমন এক মহিমাময় ও গৌরবাম-িত মাস যে মাসে (আল্লাহতায়ালার পাক কালাম) কোরআন শরীফ নাযিল হয়েছে। শুধু কোরআন শরীফই নয়, পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থসমূহ ও সহীফাগুলো এই পবিত্র রমজান মাসে নাযিল করা হয়। রমজান মাসের পহেলা (কিংবা ৩রা তারিখে) হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সহীফা লাভ করেন, ৬ তারিখে হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে পবিত্র ‘তাওরাত’ পৌঁছায়। হযরত দাউদ (আঃ)-এর কাছে পবিত্র যাবুর নাযিল হয় এই পবিত্র মাসের ১৮ তারিখে, আর হযরত ঈসা (আঃ)-এর পবিত্র ‘ইনজিল’ লাভ করেন এই মাসের ১২ তারিখে। এ থেকে সহজেই পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব, পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য বোঝা যায়। ‘রোজা’ একটি ফারসী শব্দ, আরবী ভাষায় রোজাকে ‘সিয়াম’ বলা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ও সংযম করাকে রোজা বলে। ‘সিয়াম’ শব্দেরও ঐ একই অর্থ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হল সিয়াম বা রোজা। অবশ্য শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা বা ‘উপবাস’ ব্রত বললে ‘সিয়াম’ এর সঠিক রূপ প্রকাশ পায় না। ‘উপবাস ব্রত’ পৃথিবীর সকল ধর্মেই রয়েছে। তবে সুদীর্ঘ একমাসব্যাপী ভোর (সোবহে সাদেক) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস এবং সেই সঙ্গে কঠোর সংযম সাধনার বিধান ইসলাম ছাড়া পৃথিবীতে আর অন্য কোন ধর্মে নেই। ‘রমজ’ শব্দ থেকে এসেছে ‘রমজান’। ‘রমজ’ শব্দের অর্থ হল জ্বালিয়ে দেয়া, দগ্ধ করা। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষের মনের কলুষ-কালিমা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়ে মনকে নির্মল ও পবিত্র করে তোলে, পাপ রাশিকে সম্পূর্ণ রূপে দগ্ধ করে দিয়ে মানুষকে করে তোলে পুণ্যবান, যোগ্য করে তোলে সাধারণ মানুষকে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার অসাধারণ করুণা ও ক্ষমা গ্রহণ করার জন্য। স্বভাবতই নামাজের পরেই মুসলমানের জন্য আল্লাহতায়ালা যে এবাদত ফরজ করেছেন তা হল পবিত্র রমজান মাসের রোজা। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ-তায়ালা এরশাদ করেন। হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমােেদর পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল। আশা যে, তোমরা মুত্তাকী হবে।’’ এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যত শরীয়ত দুনিয়ায় নাজিল হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই রোজা রাখার বিধি- ব্যবস্থা ছিল। নামাজের মত এই রোজাকেও আবহমানকাল থেকেই সকল নবীর শরীয়তেই ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র রমজানের রোজা তিনটি ভাগে বিভক্ত ‘রহমত’ ‘মাগফেরাত’ ও ‘নাজাত’। প্রথম দশদিন পরম করুণাময় আল্লাহ-তায়ালার অসীম রহমত ঝরে পড়তে থাকে। পৃথিবীর উপরে, তার রোজাদার মোমেন বান্দাদের উপরে। দ্বিতীয় দশদিনে পাওয়া যায় ‘মাগফেরাত’ বা ক্ষমা-অন্যায় কাজ ও চিন্তার জন্য ক্ষমা, পাপাচার ও চারিত্রিক নোংরামির জন্য ক্ষমা। শেষ দশদিনে পাওয়া যায় মুক্তি-দোজখের শাস্তি থেকে মুক্তি, পাপ থেকে মুক্তি, যৌন-ক্ষুধা থেকে মুক্তি, কামনা থেকে মুক্তি, অশ্লীলতা থেকে মুক্তি, লোভ-লালসা থেকে মুক্তি, সকল প্রকারের অযৌক্তিক বন্ধন থেকে মুক্তি, সকল অশুভ কার্যকলাপ ও অন্যায় থেকে মুক্তি। আর এই মুক্তির জন্য’ এতেকাফের সাধনা। মাহে রমজানের এই রোজার মাধ্যমে সংযম সাধনার ফলে মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় পরম করুণাময়ের নৈকট্য লাভ করার। কারণ, রমজানের ‘সিয়াম’ মানুষের মনের রিপুগুলোকে সংযত করে, দীন-দরিদ্র ক্ষুধার্তদের কষ্ট ও যন্ত্রণা ব্যথা ও বেদনা হৃদয়ঙ্গম করতে সাহায্য করে, মানুষকে ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। দয়াল নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেন ‘আমি সেই মহান আল্লাহর কসম করিয়া বলিতেছি, যাঁহার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় জানিও আল্লাহর নিকট রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশক বা কস্তুরির’ চেয়ে অধিক সুগন্ধি বলিয়া বিবেচিত”।


Copyright Daily Inqilab

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী