Salatul Tahazzud in detail- সালাতুল তাহাজ্জুদ (বিস্তারিত)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসূল (সঃ) এর উপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত হন নি। তবে তাঁর উম্মত অর্থাৎ আমাদের জন্য এই নামাজ সুন্নতে গায়েরে মুয়াক্কাদাহ; যা আদায় করলে সওয়াব হবে কিন্তু আদায় না করলে কোন গুনাহ হবে না। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়তের সঙ্গে সওয়াবের আশায় মাহে রমজানে রোযা পালন করে, তার বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় মাহে রমজানের রাতে কিয়াম করে তার বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে রাতে কিয়াম করে বা রাত জেগে ইবাদত বন্দেগি করে তার বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়বেন?
রমজান মাস ও অন্যান্য সময়ে তাহাজ্জুদ নামাজ রাত দ্বিপ্রহরের পর অর্থাৎ মধ্য রাতের পর পড়তে হয়। মধ্য রাতে যখন লোকেরা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, তখন রোজাদার মুমিন বান্দা ঘুম থেকে জেগে ইবাদত-বন্দেগী করেন এবং সুবেহ সাদিক পর্যন্ত তাহাজ্জুদে মশগুল থাকেন। সুবেহ সাদিক হয়ে গেলে তাহাজ্জুদ নামাজ আর পড়া যায় না। যদি রাত দ্বিপ্রহরের পর অর্থাৎ মধ্য রাতের পর ঘুম থেকে জাগার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে এশার নামাজের ফরজ নামাজ শেষ করে ভিতর নামাজের আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নিলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে উল্লেখ্য যে, রাত দ্বিপ্রহরের পর অর্থাৎ মধ্য রাতের পর দোয়া কবুলের খাস সময়; এজন্য এ সময় তাহাজ্জুদ পড়ে দোয়া করলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা খুব বেশি।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকআত?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো চার (৪) রাকআত, কখনো আট (৮) রাকআত এবং কখনো বারো (১২) রাকআত পড়েছিলেন। তাই রোজাদার ব্যক্তি তার শারীরিক সামর্থ্য ও সময় বিবেচনায় তাহাজ্জুদ আদায় করবেন। কিন্তু কেউ যদি কমপক্ষে দুই রাকআত আদায় করেন তাতেও এ নামাজ আদায় হবে। এ সম্পর্কে হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকআত নামাজ পড়ে নেয়, সে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী হবে। রমজান মাসে তাহাজ্জুদে কোরানের আয়াত খুব বেশি তেলাওয়াত করা উত্তম। যদি দীর্ঘ সূরা মুখস্ত থাকে তাহলে দীর্ঘ সূরা তেলাওয়াত করবে।
তাহাজ্জুদ নামাজ কীভাবে পড়বো?
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে দুই রাকআত করে। এই নামাজ পড়ার নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই। প্রথমে ওযু অবস্থায় কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে। নিয়ত আরবী, বাংলা যে কোনভাবে করা যাবে। নিয়ত করার পর সা'না পড়বে- তারপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় সূরা ফাতিহার সহিত অন্য সূরা মিলাতে হবে। তবে রমজান মাসে তাহাজ্জুদে কোরানের আয়াত খুব বেশি তেলাওয়াত করা উত্তম। যদি দীর্ঘ সূরা মুখস্ত থাকে তাহলে দীর্ঘ সূরা তেলাওয়াত করবে। অন্যথায় ১২ রাকআতের প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহার সহিত সূরা ইখলাস ১২বার, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতিহার সহিত সূরা ইখলাস ১১বার, তৃতীয় রাকআতে সূরা ফাতিহার সহিত সূরা ইখলাস ১০বার, চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহার সহিত সূরা ইখলাস ৯বার, পঞ্চম রাকআতে সূরা ফাতিহার সহিত সূরা ইখলাস ৮বার, ষষ্ঠ রাকআতে সূরা ফাতিহার সহিত সূরা ইখলাস ৭বার এভাবে পর্যায়ক্রমে নামাজ শেষ করবে। আবার প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার সহিত সূরা ইখলাস ৩বার করেও তেলাওয়াত করা যায়। এছাড়া সূরা মুজাম্মিল, আয়তুল কুরসি এবং সূরা আল-ইনশিরাহও তেলাওয়াত করা যাবে।
তাহাজ্জুদের ফজিলত
মাহে রমজানে দিবাভাগে পানাহার বর্জন করার পাশাপাশি রাতে আরামের ঘুম ত্যাগ করে তাহাজ্জুদ পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অন্যান্য নফল ইবাদতের চেয়ে অনেক বেশি এবং আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয়। এজন্য মহান আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের উপর এই নামাজ ফরজ করে দিয়েছিলেন। রোজাদার ব্যক্তি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করলে আল্লাহ তার পাপরাশি মার্জনা করে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার প্রভূ প্রত্যেক রাতের শেসাংশে নিকটতম আসমানে অবতরন করেন এবং বলতে থাকেন, যে কেউ আমার কাছে প্রার্থনা করবে আমি তা কবুল করবো, যে কেউ আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তা দান করবো, এজ কেউ আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করবো। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ অই ব্যক্তির উপর রহমত নাজিল করেন যিনি রাতে নিদ্রা থেকে জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন এবং তার স্ত্রীকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দেন। অতঃপর স্ত্রী তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। এমনকি যদি স্ত্রী ঘুম থেকে জাগ্রত হতে রাজি না হন তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেন। ( আবু দাউদ ও নাসায়ী)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন,মুসলমানদের মধ্যে আল-কোরআনে অভিজ্ঞ এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী অধিক সম্মানের অধিকারী হবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন