তারাবির নামাজের ফজিলত
সালাতুত তারাবি রমজান মাসের বিশেষ একটি ইবাদত। মাহে রমজানে রাতের বেলায়
এশার ফরজ ও সুন্নাত নামাজের পরে বিতরের আগে তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়।
তারাবি আরবি শব্দটি তারবিহাতুন মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ
ইস্তিরাহাত বা আরাম করা, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি।
যেহেতু ২০ রাকাত তারাবির নামাজ প্রতি চার রাকাত অন্তর চার রাকাত নামাজের
সমপরিমাণ সময় বিরতি দিয়ে আরামের সঙ্গে আদায় করা হয়, সে জন্য এ নামাজকে
তারাবির নামাজ বলা হয়। তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ, আদায় না করলে
অবশ্যই গুনাহ হবে। তারাবির নামাজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত।
রাসুলুল্লাহ ( স.) বলেছেন : যে ব্যক্তি পূর্ণ ইমানের সওয়াব হাসিলের
উদ্দেশ্যে রমজান মাসের রাতে কিয়াম করবে অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে,
তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ( সহিহ আল- বোখারি : ১৯০১,
সহিহ মুসলিম : ৭৫৯ , সুনানে দারেমি : ১৮১৭ , মুসনাদে আহমাদ : ৯৪৪৫ ,
মুসনাদে হুমাইদি : ১০৩৭ )
তারাবির নামাজের গুরুত্ব সীমাহীন। কারণ মাহে রমজান যেসব বিশেষ
বৈশিষ্ট্যের জন্য মহিমান্বিত তার মধ্যে অন্যতম হলো তারাবির নামাজ। তারাবির
নামাজ মুসলমানদের ওপর সারা বছরের মধ্যে শুধুই রমজান মাসের জন্য সুন্নাত
বিধান হিসেবে স্থিরকৃত।
যেহেতু রমজান মাস ছাড়া বছরের অন্য কোনো সময়ে তারাবির নামাজ আদায় করার
সুযোগ নেই, তাই বার্ষিক ইবাদত হিসেবে এর গুরুত্ব অন্যান্য সুন্নাত নামাজ
অপেক্ষা বেশি। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবির
নামাজকে অত্যন্ত গুরুত্বসহ আদায় করতেন বলে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা
করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবির
নামাজের ব্যাপারে সাহাবিদের উৎসাহিত করতেন কিন্তু তিনি তাঁদেরকে দৃঢ়তার
সঙ্গে আদেশ করতেন না। তিনি বলতেন : যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের
উদ্দেশে রমজান মাসে কিয়াম করবে অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের
সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ আল-বোখারি : ২০০৯, সহিহ মুসলিম :
৭৫৯, মুআত্তা ইমাম মালেক , খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৫৬ , হাদিস : ৩৭৬)।
তারাবির নামাজ সুন্নাত মনে করে গুরুত্বহীন ভাবা উচিত নয়। যদিও এটা ফরজ
বা ওয়াজিব নয়, তারপরও সুন্নাতে মুআক্কাদাহ হিসেবে এর গুরুত্ব মোটেও কম নয়।
বিজ্ঞ আলিমরা সুন্নাতে মুআক্কাদাহকে ওয়াজিবের কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত
করেছেন। অর্থাৎ তারাবির নামাজ বর্জন করলে অবশ্যই গুনাহ হবে।
হজরত উরওয়াহ ইবনে যুবায়ের (রা.) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে একটি হাদিস
বর্ণনা করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি)
আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তাঁরা
দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হল। অতঃপর তৃতীয়
এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলেন কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না।
অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন: তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি
লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধুমাত্র এ ভয়ে আমি তোমাদের নিকট আসা থেকে বিরত
থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের ওপর উহা ফরজ করে দেওয়া হয়।
(সহীহ আল-বোখারি : ৯২৪, সহিহ মুসলিম : ৭৬১, মুআত্তা ইমাম মালেক : খণ্ড : ২
, পৃষ্ঠা : ১৫৬, হাদিস : ৩৭৫)।
হাদিসের তথ্যমতে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনদিন
মসজিদে নববীতে জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। অতঃপর রাসুলের
যুগে এবং হজরত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতকালে এবং হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতের
প্রথম দিকে মুসলমানরা একাকি অথবা খণ্ড খণ্ড ছোট জামাতে তারাবির নামাজ আদায়
করতেন।
অবশেষে হজরত ওমর (রা.) হজরত উবাই ইবনে কা’ব (
রা.)-কে ইমাম নির্ধারণ করে সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। (সহিহ আল-বোখারি : ২০১০) অতএব মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল তারাবির নামাজকে অবহেলা করে মহান আল্লাহর দেওয়া গুনাহ মাফের বিশেষ সুযোগ হাতছাড়া করা হবে চরম নির্বুদ্ধিতা।
রা.)-কে ইমাম নির্ধারণ করে সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। (সহিহ আল-বোখারি : ২০১০) অতএব মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল তারাবির নামাজকে অবহেলা করে মহান আল্লাহর দেওয়া গুনাহ মাফের বিশেষ সুযোগ হাতছাড়া করা হবে চরম নির্বুদ্ধিতা।
লেখক : পেশ ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন