শবেবরাতের আমল- Amol of Shob-e-barat
শবেবরাতের ইবাদতকে কোনো অবস্থাতেই
খাটো করে দেখা উচিত হবে না। যারা বলে শবেবরাত বলে কিছু নেই, এ রাতে
ইবাদত করা বিদআত, তারা সত্য সত্যই গোমরাহ। শয়তান তাদের দিয়ে মানুষকে ইবাদতবিমুখ
করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ রাতে মানুষ পাক-সাফ হয়ে
আল্লাহপাকরে ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে মসজিদে আসে ইবাদত
করতে। মনে করে যে, সারা বছর তো আল্লাহপাকের নাফরমানি করে করে আমলনামায়
পাপের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছি। আজকের এই মোবারক রাতে তওবা, ইস্তেগফার করে
আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন।
কারণ হাদিসে কুদসিতে আছে- এ রাতে আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে এভাবে ডাকতে
থাকেন, ‘আছো কি
কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব। আছো কি
কোনো জীবিকা অন্বেষণকারী, যাকে আমি জীবিকা প্রদান করব। আছো কি কোনো ব্যথিত, বিপদগ্রস্ত, যা
থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রত্যাশী, যাকে আমি সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে নিষ্কৃতি
প্রদান করব। আছো কি কোনো প্রার্থনকারী, আছো কি? এভাবে
মহান দয়ালু প্রেমময় আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে আহ্বান করতে থাকেন সুবহে
সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত’। এই আশ্বাস বাণী আসার পর যখন কোনো লেবাসধারী আলেম
কাউকে ইবাদতের পুণ্য কাজ থেকে বিরত রেখে আবার জুয়ার আড্ডায় পাঠিয়ে দেয়, তাদের
স্থান কোথায় হবে আমার জানা নেই। মনে রাখতে হবে, আল্লাহপাক
কখন বান্দার কোন ইবাদত কবুল করে নেন, কেউই
বলতে পারবেন না। কথিত আছে, একবার
হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে সাক্ষাতের জন্য কূহে তুরে যাচ্ছেন।
পথিমধ্যে দেখেন এক বৃদ্ধ লোক বলছেন ‘হে
আল্লাহ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমার সাথে কোনো কথা
বল না, দেখাও
দাও না। হে আল্লাহ, তুমি
যদি আমাকে দেখা দাও তাহলে আমি তোমাকে আমার ছাগলের দুধ দিয়ে
পেট ভরে খাইয়ে দিতাম। খুব দরদ দিয়ে সে এই কথাগুলো বলছিল। হযরত মূসা (আ.)
তার এই কথাগুলো শুনে দিল এক ধমক, ‘বেটা। তোর ছাগলের দুধ খেতে আল্লাহ আসবে? তুই
জানিস না, আল্লাহপাক
পানাহার থেকে পবিত্র।’ সে মূসা (আ.)-এর এই ধমক খেয়ে চুপ করে গেল।
এদিকে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে কথা বলতে গেলে
আল্লাহপাক তাকে বললেন, আমার বান্দা আমার প্রতি পূর্ণবিশ্বাস নিয়ে এই কথাগুলো
বলতে ছিল। তখন আমি খুব আনন্দ অনুভব করতে ছিলাম, তুমি
তাকে ধমক দিয়ে ভুল করেছ। একজন ঘৃণ্য, পাপী
আল্লাহপাকের সৃষ্ট জীব একটি কুকুরকে পানি পান করিয়ে আল্লাহপাকের
খুশনুদী হাসিল করে ফেলেছিল, অর্থাৎ আল্লাহপাক বান্দার কোন কাজটাকে
পছন্দ করে ফেলেন, কেউ বলতে পারবে না। কাজেই আল্লাহর ওয়াস্তে মানুষকে
ইবাদতবিমুখ করবেন না। এ রাত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস আছে। রাসূলে পাক (সা.) চারটির
রাতকে মর্যাদাপূর্ণ রাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। যথা- শবেকদর, শবেবরাত, শবেমিরাজ
ও শবে ঈদাইন। তার মধ্যে শবেবরাত অন্যতম। এ রাত
সম্পর্কে বলতে গিয়ে হযরত মা আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “এক
রাতে রাসূলে পাক (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজে এত দীর্ঘ সেজদারত ছিলেন
যে, আমি সন্দিহান
হয়ে পড়েছিলাম হয়তো রাসূলে পাক (সা.) এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে গেছেন।
আমি বিচলিত হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নাড়া দিলাম।
তাতে তিনি নড়ে উঠলেন। আমি নিশ্চিত হয়ে নিজ স্থানে চলে গেলাম। নামাজ শেষ
করে আমার সাথে কিছু কথা বলার পর ইরশাদ করলেন, হে
আয়েশা আজ কোন রাত জান? আমি বললাম, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই (সা.) অধিক জানেন।
তিনি বললেন, আজ শাবান মাসের ১৫তম রাত। এ
রাতে আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীকে কৃপা করেন। এ রাতে বিশ্ববাসীর
তকদিরসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের নথিপত্র কার্যকর করার উদ্দেশ্যে ফেরেশতাদের
নিকট অর্পণ করেন। যার মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, হায়াত, রিজিক, দৌলত, জয়-পরাজয়, মান-সম্মান, সুখ-দুঃখ
উত্থান-পতন ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশিত থাকে।” আল্লাহপাক বলেন, হা, মিম এই
সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব (কোরআন)
এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যেক
হিকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত করা হয়। (সূরা দুখান, আ.
১-৪)। এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, পবিত্র
কোরআন এই শবেবরাতে নাজিল হয়েছে। আবার সূরা কদরে বলা হয়েছে, পবিত্র
কোরআন কদরের রাতে নাজিল হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, কোনটি
সঠিক? সঠিক
দুটোই। এর অর্থ হলো- আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন বরাতের রাতে
লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ
সেখানে গিয়ে হযরত জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন যে, আমি আর
উপরে উঠতে পারব না। বোরাকও যাবে না। এখান থেকে আপনাকে একাই যেতে হবে রফরফে
করে, তারপর এখানে
থেকে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে রাসূলে
পাক (সা.)-এর নিকট নাজিল করার কাজ শবেকদরে শুরু করেছেন। কারণ সিদ্ধান্ত
গ্রহণ আর কার্যকর করা এক নয়। যেমন- সংসদে
কোনো একটি আইন পাস হওয়ার পর তা গেজেট আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে চলে আসে। তারপর তা
কার্যকর করা হয়। সুতরাং আজকের রাতটি হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাত। আগামী
এক বছরের বাজেট এ রাতেই পাস হয়ে যাবে। কাজেই বাজেট পাসের আগে যার যার মনের
কামনা-বাসনা আল্লাহপাকের দরবারে প্রেরণ করতে হবে। আল্লাহপাক তার প্রিয়
বান্দাদের সে সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহপাক এ রাতে সর্বনি¤œ আকাশে
এসে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং আর্জি মঞ্জুর করে থাকেন। তাই বান্দার কাজ হলো এ রাতে
মনের যত কামনা-বাসনা তার নিকট পেশ করা। এ সূবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত
করার জন্যই কিছু সংখ্যক মুখোশধারী আলেমকে খারিজিরা নিযুক্ত করেছে। সাবধান, তাদের
খপ্পরে পড়ে ঈমান, আমল এবং এ সুবর্ণ সুযোগ থেকে মাহরুম হবেন না। আল্লাহপাক
বলেন, আমি
বান্দাকে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। বান্দা চাইলেই আমি দিয়ে দেব। শবেবরাতের
আমল শবেবরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। তবে নফল নামাজ ও
তাহাজ্জুদ যেভাবে পড়া হয়, সেভাবেই
বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে হবে। যে কোনো সূরা দিয়ে
নামাজ পড়তে পারবেন। তবে ইবাদত ও নামাজে আন্তরিকতা ও একাগ্রতা থাকতে হবে।
নামাজে ক্লান্তি এসে গেলে জিকির-আজকার অথবা কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন।
মনে রাখবেন, আল্লাহপাক সাধ্যাতীত ইবাদত পছন্দ করেন না। ইবাদতের সংখ্যা
বৃদ্ধির চেয়ে আন্তরিকতা খুশুখুজু বৃদ্ধির প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া উচিত।
মহব্বতের সাথে অল্প ইবাদত গাফিলতির সাথে অসংখ্য ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়। এ রাতে
বেশি বেশি করতে তওবা করতে হবে। তওবার অনুতাপ অনুশোচনা থাকতে হবে। নির্জনে
বসে জীবনের সমস্ত গোনাহের কথা মনে করে লজ্জায় কাতর হয়ে কাঁদতে হবে। রাসূলে
পাক (সা.) বলেন, পাপী বান্দার চোখের পানি আল্লাহপাকের ক্রোধাগ্নিকে নিভিয়ে
দেয়। শবেবরাতের দোয়া হযরত মা আয়েশা (রা.) বলেন, এক
রাতে আমি হুজুরকে না পেয়ে মনে করলাম তিনি হয়তো অন্য বিবির ঘরে
আছেন। আমি তখন তাঁকে খোঁজার জন্য উঠলাম। এমন সময় আমার হাত
তাঁর পা মোবারক স্পর্শ করল। আমি দেখলাম, তিনি
সেজদারত আছেন এবং এই দোয়াটি পড়ছেন, “হে
আল্লাহ আমার শরীর এবং আমার অন্তর তোমাকে সেজদা করছে। আমার
অন্তর তোমার প্রতি ঈমান এনেছে। আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করছি। আমি আমার
জীবনের ওপর জুলুম করেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। তুমি ছাড়া গোনাহ মাফ করার
কেউ নেই। আমি তোমার আজাব থেকে বাঁচার জন্য তোমার আশ্রয় চাই। তোমার ক্রোধ
থেকে বাঁচার জন্য তোমার রেজামন্দি চাই। তোমার আজাব থেকে নিরাপদ থাকার জন্য
তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে কেউ শেষ করতে পারবে
না। তুমি নিজেই তোমার প্রশংসা করছ। আর তুমিই তোমার প্রশংসা করার ক্ষমতা
রাখ। অন্য কেউ তোমার অনুগ্রহ ছাড়া পারে না।” মা
আয়েশা (রা.) আরো বলেন, রাসূলে খোদা কখনও দাঁড়িয়ে যেতেন, আবার
কখনও বসে পড়তেন। এভাবে সকাল হয়ে যেত। এ জন্য রাসূলে পাক (সা.)-এর পা
ফুলে গিয়েছিল। আমি তার পায়ে ফুঁ দিতে দিতে বললাম, হে
আল্লাহর রাসূল (সা.), আমার মা-বাপ আপনার ওপর কোরবান হোক।
আপনার আগ-পিছের সমস্ত গোনাহ আল্লাহপাক মাফ করে দিয়েছেন।
তারপরও আপনি কেন এভাবে কষ্ট করছেন? তখন
রাসূলে পাক (সা.) বললেন, আমি কি আল্লাহপাকের শোকর আদায় করব না? যিনি
সমস্ত গোনাহ থেকে পবিত্র, তিনি যদি এভাবে কান্নাকাটি
করতে পারেন, সে হিসেবে আমরা কি করছি? আমরা
কি এই বরকতময় রাত পেয়ে আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে সক্ষম
হচ্ছি? তাই
আসুন, কতিপয়
সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করে এবং খাঁটি তওবার মাধ্যমে নিজেদেরকে পূতপবিত্র
করি। এ সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে। এই রাতে যাদের দোয়া কবুল
হবে না রাসূলে পাক (সা.) বলেন, শাবান
মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহপাক সর্বনি¤œ আকাশে
নেমে আসেন। সমস্ত ক্ষমা প্রার্থী মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক, হিংসাকারী, রক্তসম্পর্ক
ছিন্নকারী ও ধর্ষণকারী ছাড়া আর যাদের ক্ষমা করবেন না তারা হলেন- জাদুকর, গণক, অন্যায়ভাবে
হত্যাকারী, অশ্লীল গায়ক, পরস্পর
শত্রুতাভাব পোষণকারী, অত্যাচারী শাসক ও তার সহযোগী, মিথ্যা
শপথে পণ্য বিক্রয়কারী, মদ্যপ, পরস্ত্রীগামী, মাতা-পিতার
অবাধ্য সন্তান, কৃপণ, পরোক্ষ নিন্দাকারী ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের গোনাহ তওবা ছাড়া
মাফ হয় না। আল্লাহ আমাদেরকে ওহাবী ফেতনা থেকে রক্ষা করুন।
আমিন।
শবেবরাতের ইবাদতকে কোনো
অবস্থাতেই খাটো করে দেখা উচিত হবে না। যারা বলে শবেবরাত বলে কিছু নেই, এ
রাতে ইবাদত করা বিদআত, তারা সত্য সত্যই গোমরাহ। শয়তান তাদের দিয়ে মানুষকে
ইবাদতবিমুখ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ রাতে মানুষ পাক-সাফ হয়ে আল্লাহপাকরে ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে মসজিদে আসে
ইবাদত করতে। মনে করে যে, সারা বছর তো আল্লাহপাকের নাফরমানি করে করে
আমলনামায় পাপের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছি। আজকের এই মোবারক রাতে তওবা, ইস্তেগফার
করে আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক অবশ্যই ক্ষমা করে
দেবেন। কারণ হাদিসে কুদসিতে আছেÑ এ রাতে আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে এভাবে
ডাকতে থাকেন, ‘আছো কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।
আছো কি কোনো জীবিকা অন্বেষণকারী, যাকে আমি জীবিকা প্রদান করব। আছো কি কোনো
ব্যথিত, বিপদগ্রস্ত, যা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রত্যাশী, যাকে আমি সমস্ত
বিপদ-আপদ থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করব। আছো কি কোনো প্রার্থনকারী, আছো কিÑ
এভাবে মহান দয়ালু প্রেমময় আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে আহ্বান করতে থাকেন
সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত’। এই আশ্বাস বাণী আসার পর যখন কোনো লেবাসধারী
আলেম কাউকে ইবাদতের পুণ্য কাজ থেকে বিরত রেখে আবার জুয়ার আড্ডায় পাঠিয়ে
দেয়, তাদের স্থান কোথায় হবে আমার জানা নেই।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহপাক কখন বান্দার কোন ইবাদত কবুল করে নেন, কেউই বলতে
পারবেন না। কথিত আছে, একবার হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে সাক্ষাতের
জন্য কূহে তুরে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে দেখেন এক বৃদ্ধ লোক বলছেন ‘হে আল্লাহ
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমার সাথে কোনো কথা বল না, দেখাও দাও
না। হে আল্লাহ, তুমি যদি আমাকে দেখা দাও তাহলে আমি তোমাকে আমার ছাগলের দুধ
দিয়ে পেট ভরে খাইয়ে দিতাম। খুব দরদ দিয়ে সে এই কথাগুলো বলছিল। হযরত মূসা
(আ.) তার এই কথাগুলো শুনে দিল এক ধমক, ‘বেটা। তোর ছাগলের দুধ খেতে আল্লাহ
আসবে? তুই জানিস না, আল্লাহপাক পানাহার থেকে পবিত্র।’ সে মূসা (আ.)-এর এই
ধমক খেয়ে চুপ করে গেল। এদিকে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে কথা বলতে
গেলে আল্লাহপাক তাকে বললেন, আমার বান্দা আমার প্রতি পূর্ণবিশ্বাস নিয়ে এই
কথাগুলো বলতে ছিল। তখন আমি খুব আনন্দ অনুভব করতে ছিলাম, তুমি তাকে ধমক দিয়ে
ভুল করেছ।
একজন ঘৃণ্য, পাপী আল্লাহপাকের সৃষ্ট জীব একটি কুকুরকে পানি পান করিয়ে
আল্লাহপাকের খুশনুদী হাসিল করে ফেলেছিল, অর্থাৎ আল্লাহপাক বান্দার কোন
কাজটাকে পছন্দ করে ফেলেন, কেউ বলতে পারবে না। কাজেই আল্লাহর ওয়াস্তে
মানুষকে ইবাদতবিমুখ করবেন না।
এ রাত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস আছে। রাসূলে পাক (সা.) চারটির রাতকে
মর্যাদাপূর্ণ রাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। যথাÑ শবেকদর, শবেবরাত, শবেমিরাজ ও
শবে ঈদাইন। তার মধ্যে শবেবরাত অন্যতম।
এ রাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে হযরত মা আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “এক রাতে
রাসূলে পাক (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজে এত দীর্ঘ সেজদারত ছিলেন যে, আমি
সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম হয়তো রাসূলে পাক (সা.) এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে
গেছেন। আমি বিচলিত হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নাড়া
দিলাম। তাতে তিনি নড়ে উঠলেন। আমি নিশ্চিত হয়ে নিজ স্থানে চলে গেলাম। নামাজ
শেষ করে আমার সাথে কিছু কথা বলার পর ইরশাদ করলেন, হে আয়েশা আজ কোন রাত জান?
আমি বললাম, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই (সা.) অধিক জানেন। তিনি বললেন, আজ
শাবান মাসের ১৫তম রাত। এ রাতে আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীকে কৃপা করেন। এ রাতে
বিশ্ববাসীর তকদিরসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের নথিপত্র কার্যকর করার উদ্দেশ্যে
ফেরেশতাদের নিকট অর্পণ করেন। যার মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, হায়াত, রিজিক, দৌলত,
জয়-পরাজয়, মান-সম্মান, সুখ-দুঃখ উত্থান-পতন ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশিত থাকে।”
আল্লাহপাক বলেন, হা, মিম এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব
(কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রজনীতে
প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত করা হয়। (সূরা দুখান, আ. ১-৪)। এই
আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, পবিত্র কোরআন এই শবেবরাতে নাজিল হয়েছে। আবার সূরা
কদরে বলা হয়েছে, পবিত্র কোরআন কদরের রাতে নাজিল হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে
পারে, কোনটি সঠিক? সঠিক দুটোই। এর অর্থ হলোÑ আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন বরাতের
রাতে লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
অর্থাৎ সেখানে গিয়ে হযরত জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন যে, আমি আর উপরে উঠতে পারব
না। বোরাকও যাবে না। এখান থেকে আপনাকে একাই যেতে হবে রফরফে করে, তারপর
এখানে থেকে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে
রাসূলে পাক (সা.)-এর নিকট নাজিল করার কাজ শবেকদরে শুরু করেছেন। কারণ
সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর কার্যকর করা এক নয়। যেমনÑ সংসদে কোনো একটি আইন পাস
হওয়ার পর তা গেজেট আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে চলে আসে। তারপর তা কার্যকর করা
হয়। সুতরাং আজকের রাতটি হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাত। আগামী এক বছরের বাজেট এ
রাতেই পাস হয়ে যাবে। কাজেই বাজেট পাসের আগে যার যার মনের কামনা-বাসনা
আল্লাহপাকের দরবারে প্রেরণ করতে হবে। আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাদের সে
সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহপাক এ রাতে সর্বনি¤œ আকাশে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন
এবং আর্জি মঞ্জুর করে থাকেন। তাই বান্দার কাজ হলো এ রাতে মনের যত
কামনা-বাসনা তার নিকট পেশ করা। এ সূবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার জন্যই কিছু
সংখ্যক মুখোশধারী আলেমকে খারিজিরা নিযুক্ত করেছে। সাবধান, তাদের খপ্পরে
পড়ে ঈমান, আমল এবং এ সুবর্ণ সুযোগ থেকে মাহরুম হবেন না। আল্লাহপাক বলেন,
আমি বান্দাকে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। বান্দা চাইলেই আমি দিয়ে
দেব।
শবেবরাতের আমল
শবেবরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। তবে নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ
যেভাবে পড়া হয়, সেভাবেই বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে হবে। যে কোনো সূরা
দিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন। তবে ইবাদত ও নামাজে আন্তরিকতা ও একাগ্রতা থাকতে
হবে। নামাজে ক্লান্তি এসে গেলে জিকির-আজকার অথবা কোরআন তেলাওয়াত করতে
পারেন। মনে রাখবেন, আল্লাহপাক সাধ্যাতীত ইবাদত পছন্দ করেন না। ইবাদতের
সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে আন্তরিকতা খুশুখুজু বৃদ্ধির প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া
উচিত। মহব্বতের সাথে অল্প ইবাদত গাফিলতির সাথে অসংখ্য ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়। এ
রাতে বেশি বেশি করতে তওবা করতে হবে। তওবার অনুতাপ অনুশোচনা থাকতে হবে।
নির্জনে বসে জীবনের সমস্ত গোনাহের কথা মনে করে লজ্জায় কাতর হয়ে কাঁদতে হবে।
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, পাপী বান্দার চোখের পানি আল্লাহপাকের ক্রোধাগ্নিকে
নিভিয়ে দেয়।
শবেবরাতের দোয়া
হযরত মা আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি হুজুরকে না পেয়ে মনে করলাম তিনি
হয়তো অন্য বিবির ঘরে আছেন। আমি তখন তাঁকে খোঁজার জন্য উঠলাম। এমন সময় আমার
হাত তাঁর পা মোবারক স্পর্শ করল। আমি দেখলাম, তিনি সেজদারত আছেন এবং এই
দোয়াটি পড়ছেন, “হে আল্লাহ আমার শরীর এবং আমার অন্তর তোমাকে সেজদা করছে।
আমার অন্তর তোমার প্রতি ঈমান এনেছে। আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করছি। আমি
আমার জীবনের ওপর জুলুম করেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। তুমি ছাড়া গোনাহ মাফ
করার কেউ নেই। আমি তোমার আজাব থেকে বাঁচার জন্য তোমার আশ্রয় চাই। তোমার
ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য তোমার রেজামন্দি চাই। তোমার আজাব থেকে নিরাপদ থাকার
জন্য তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে কেউ শেষ করতে
পারবে না। তুমি নিজেই তোমার প্রশংসা করছ। আর তুমিই তোমার প্রশংসা করার
ক্ষমতা রাখ। অন্য কেউ তোমার অনুগ্রহ ছাড়া পারে না।”
মা আয়েশা (রা.) আরো বলেন, রাসূলে খোদা কখনও দাঁড়িয়ে যেতেন, আবার কখনও বসে
পড়তেন। এভাবে সকাল হয়ে যেত। এ জন্য রাসূলে পাক (সা.)-এর পা ফুলে গিয়েছিল।
আমি তার পায়ে ফুঁ দিতে দিতে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমার মা-বাপ
আপনার ওপর কোরবান হোক। আপনার আগ-পিছের সমস্ত গোনাহ আল্লাহপাক মাফ করে
দিয়েছেন। তারপরও আপনি কেন এভাবে কষ্ট করছেন? তখন রাসূলে পাক (সা.) বললেন,
আমি কি আল্লাহপাকের শোকর আদায় করব না? যিনি সমস্ত গোনাহ থেকে পবিত্র, তিনি
যদি এভাবে কান্নাকাটি করতে পারেন, সে হিসেবে আমরা কি করছি? আমরা কি এই
বরকতময় রাত পেয়ে আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছি? তাই আসুন,
কতিপয় সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করে এবং খাঁটি তওবার মাধ্যমে নিজেদেরকে
পূতপবিত্র করি। এ সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে।
এই রাতে যাদের দোয়া কবুল হবে না
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহপাক সর্বনি¤œ
আকাশে নেমে আসেন। সমস্ত ক্ষমা প্রার্থী মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন। তবে
মুশরিক, হিংসাকারী, রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ও ধর্ষণকারী ছাড়া আর যাদের ক্ষমা
করবেন না তারা হলেনÑ জাদুকর, গণক, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী, অশ্লীল গায়ক,
পরস্পর শত্রুতাভাব পোষণকারী, অত্যাচারী শাসক ও তার সহযোগী, মিথ্যা শপথে
পণ্য বিক্রয়কারী, মদ্যপ, পরস্ত্রীগামী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, কৃপণ,
পরোক্ষ নিন্দাকারী ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না।
আল্লাহ আমাদেরকে ওহাবী ফেতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
Copyright Daily Inqilab
Copyright Daily Inqilab
শবেবরাতের ফজিলত ও আমল
Copyright Daily Inqilab
Copyright Daily Inqilab
শবেবরাতের ইবাদতকে কোনো
অবস্থাতেই খাটো করে দেখা উচিত হবে না। যারা বলে শবেবরাত বলে কিছু নেই, এ
রাতে ইবাদত করা বিদআত, তারা সত্য সত্যই গোমরাহ। শয়তান তাদের দিয়ে মানুষকে
ইবাদতবিমুখ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ রাতে মানুষ পাক-সাফ হয়ে আল্লাহপাকরে ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে মসজিদে আসে
ইবাদত করতে। মনে করে যে, সারা বছর তো আল্লাহপাকের নাফরমানি করে করে
আমলনামায় পাপের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছি। আজকের এই মোবারক রাতে তওবা, ইস্তেগফার
করে আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক অবশ্যই ক্ষমা করে
দেবেন। কারণ হাদিসে কুদসিতে আছেÑ এ রাতে আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে এভাবে
ডাকতে থাকেন, ‘আছো কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।
আছো কি কোনো জীবিকা অন্বেষণকারী, যাকে আমি জীবিকা প্রদান করব। আছো কি কোনো
ব্যথিত, বিপদগ্রস্ত, যা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রত্যাশী, যাকে আমি সমস্ত
বিপদ-আপদ থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করব। আছো কি কোনো প্রার্থনকারী, আছো কিÑ
এভাবে মহান দয়ালু প্রেমময় আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে আহ্বান করতে থাকেন
সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত’। এই আশ্বাস বাণী আসার পর যখন কোনো লেবাসধারী
আলেম কাউকে ইবাদতের পুণ্য কাজ থেকে বিরত রেখে আবার জুয়ার আড্ডায় পাঠিয়ে
দেয়, তাদের স্থান কোথায় হবে আমার জানা নেই।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহপাক কখন বান্দার কোন ইবাদত কবুল করে নেন, কেউই বলতে
পারবেন না। কথিত আছে, একবার হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে সাক্ষাতের
জন্য কূহে তুরে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে দেখেন এক বৃদ্ধ লোক বলছেন ‘হে আল্লাহ
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমার সাথে কোনো কথা বল না, দেখাও দাও
না। হে আল্লাহ, তুমি যদি আমাকে দেখা দাও তাহলে আমি তোমাকে আমার ছাগলের দুধ
দিয়ে পেট ভরে খাইয়ে দিতাম। খুব দরদ দিয়ে সে এই কথাগুলো বলছিল। হযরত মূসা
(আ.) তার এই কথাগুলো শুনে দিল এক ধমক, ‘বেটা। তোর ছাগলের দুধ খেতে আল্লাহ
আসবে? তুই জানিস না, আল্লাহপাক পানাহার থেকে পবিত্র।’ সে মূসা (আ.)-এর এই
ধমক খেয়ে চুপ করে গেল। এদিকে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে কথা বলতে
গেলে আল্লাহপাক তাকে বললেন, আমার বান্দা আমার প্রতি পূর্ণবিশ্বাস নিয়ে এই
কথাগুলো বলতে ছিল। তখন আমি খুব আনন্দ অনুভব করতে ছিলাম, তুমি তাকে ধমক দিয়ে
ভুল করেছ।
একজন ঘৃণ্য, পাপী আল্লাহপাকের সৃষ্ট জীব একটি কুকুরকে পানি পান করিয়ে
আল্লাহপাকের খুশনুদী হাসিল করে ফেলেছিল, অর্থাৎ আল্লাহপাক বান্দার কোন
কাজটাকে পছন্দ করে ফেলেন, কেউ বলতে পারবে না। কাজেই আল্লাহর ওয়াস্তে
মানুষকে ইবাদতবিমুখ করবেন না।
এ রাত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস আছে। রাসূলে পাক (সা.) চারটির রাতকে
মর্যাদাপূর্ণ রাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। যথাÑ শবেকদর, শবেবরাত, শবেমিরাজ ও
শবে ঈদাইন। তার মধ্যে শবেবরাত অন্যতম।
এ রাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে হযরত মা আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “এক রাতে
রাসূলে পাক (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজে এত দীর্ঘ সেজদারত ছিলেন যে, আমি
সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম হয়তো রাসূলে পাক (সা.) এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে
গেছেন। আমি বিচলিত হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নাড়া
দিলাম। তাতে তিনি নড়ে উঠলেন। আমি নিশ্চিত হয়ে নিজ স্থানে চলে গেলাম। নামাজ
শেষ করে আমার সাথে কিছু কথা বলার পর ইরশাদ করলেন, হে আয়েশা আজ কোন রাত জান?
আমি বললাম, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই (সা.) অধিক জানেন। তিনি বললেন, আজ
শাবান মাসের ১৫তম রাত। এ রাতে আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীকে কৃপা করেন। এ রাতে
বিশ্ববাসীর তকদিরসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের নথিপত্র কার্যকর করার উদ্দেশ্যে
ফেরেশতাদের নিকট অর্পণ করেন। যার মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, হায়াত, রিজিক, দৌলত,
জয়-পরাজয়, মান-সম্মান, সুখ-দুঃখ উত্থান-পতন ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশিত থাকে।”
আল্লাহপাক বলেন, হা, মিম এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব
(কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রজনীতে
প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত করা হয়। (সূরা দুখান, আ. ১-৪)। এই
আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, পবিত্র কোরআন এই শবেবরাতে নাজিল হয়েছে। আবার সূরা
কদরে বলা হয়েছে, পবিত্র কোরআন কদরের রাতে নাজিল হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে
পারে, কোনটি সঠিক? সঠিক দুটোই। এর অর্থ হলোÑ আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন বরাতের
রাতে লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
অর্থাৎ সেখানে গিয়ে হযরত জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন যে, আমি আর উপরে উঠতে পারব
না। বোরাকও যাবে না। এখান থেকে আপনাকে একাই যেতে হবে রফরফে করে, তারপর
এখানে থেকে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে
রাসূলে পাক (সা.)-এর নিকট নাজিল করার কাজ শবেকদরে শুরু করেছেন। কারণ
সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর কার্যকর করা এক নয়। যেমনÑ সংসদে কোনো একটি আইন পাস
হওয়ার পর তা গেজেট আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে চলে আসে। তারপর তা কার্যকর করা
হয়। সুতরাং আজকের রাতটি হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাত। আগামী এক বছরের বাজেট এ
রাতেই পাস হয়ে যাবে। কাজেই বাজেট পাসের আগে যার যার মনের কামনা-বাসনা
আল্লাহপাকের দরবারে প্রেরণ করতে হবে। আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাদের সে
সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহপাক এ রাতে সর্বনি¤œ আকাশে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন
এবং আর্জি মঞ্জুর করে থাকেন। তাই বান্দার কাজ হলো এ রাতে মনের যত
কামনা-বাসনা তার নিকট পেশ করা। এ সূবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার জন্যই কিছু
সংখ্যক মুখোশধারী আলেমকে খারিজিরা নিযুক্ত করেছে। সাবধান, তাদের খপ্পরে
পড়ে ঈমান, আমল এবং এ সুবর্ণ সুযোগ থেকে মাহরুম হবেন না। আল্লাহপাক বলেন,
আমি বান্দাকে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। বান্দা চাইলেই আমি দিয়ে
দেব।
শবেবরাতের আমল
শবেবরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। তবে নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ
যেভাবে পড়া হয়, সেভাবেই বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে হবে। যে কোনো সূরা
দিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন। তবে ইবাদত ও নামাজে আন্তরিকতা ও একাগ্রতা থাকতে
হবে। নামাজে ক্লান্তি এসে গেলে জিকির-আজকার অথবা কোরআন তেলাওয়াত করতে
পারেন। মনে রাখবেন, আল্লাহপাক সাধ্যাতীত ইবাদত পছন্দ করেন না। ইবাদতের
সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে আন্তরিকতা খুশুখুজু বৃদ্ধির প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া
উচিত। মহব্বতের সাথে অল্প ইবাদত গাফিলতির সাথে অসংখ্য ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়। এ
রাতে বেশি বেশি করতে তওবা করতে হবে। তওবার অনুতাপ অনুশোচনা থাকতে হবে।
নির্জনে বসে জীবনের সমস্ত গোনাহের কথা মনে করে লজ্জায় কাতর হয়ে কাঁদতে হবে।
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, পাপী বান্দার চোখের পানি আল্লাহপাকের ক্রোধাগ্নিকে
নিভিয়ে দেয়।
শবেবরাতের দোয়া
হযরত মা আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি হুজুরকে না পেয়ে মনে করলাম তিনি
হয়তো অন্য বিবির ঘরে আছেন। আমি তখন তাঁকে খোঁজার জন্য উঠলাম। এমন সময় আমার
হাত তাঁর পা মোবারক স্পর্শ করল। আমি দেখলাম, তিনি সেজদারত আছেন এবং এই
দোয়াটি পড়ছেন, “হে আল্লাহ আমার শরীর এবং আমার অন্তর তোমাকে সেজদা করছে।
আমার অন্তর তোমার প্রতি ঈমান এনেছে। আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করছি। আমি
আমার জীবনের ওপর জুলুম করেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। তুমি ছাড়া গোনাহ মাফ
করার কেউ নেই। আমি তোমার আজাব থেকে বাঁচার জন্য তোমার আশ্রয় চাই। তোমার
ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য তোমার রেজামন্দি চাই। তোমার আজাব থেকে নিরাপদ থাকার
জন্য তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে কেউ শেষ করতে
পারবে না। তুমি নিজেই তোমার প্রশংসা করছ। আর তুমিই তোমার প্রশংসা করার
ক্ষমতা রাখ। অন্য কেউ তোমার অনুগ্রহ ছাড়া পারে না।”
মা আয়েশা (রা.) আরো বলেন, রাসূলে খোদা কখনও দাঁড়িয়ে যেতেন, আবার কখনও বসে
পড়তেন। এভাবে সকাল হয়ে যেত। এ জন্য রাসূলে পাক (সা.)-এর পা ফুলে গিয়েছিল।
আমি তার পায়ে ফুঁ দিতে দিতে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমার মা-বাপ
আপনার ওপর কোরবান হোক। আপনার আগ-পিছের সমস্ত গোনাহ আল্লাহপাক মাফ করে
দিয়েছেন। তারপরও আপনি কেন এভাবে কষ্ট করছেন? তখন রাসূলে পাক (সা.) বললেন,
আমি কি আল্লাহপাকের শোকর আদায় করব না? যিনি সমস্ত গোনাহ থেকে পবিত্র, তিনি
যদি এভাবে কান্নাকাটি করতে পারেন, সে হিসেবে আমরা কি করছি? আমরা কি এই
বরকতময় রাত পেয়ে আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছি? তাই আসুন,
কতিপয় সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করে এবং খাঁটি তওবার মাধ্যমে নিজেদেরকে
পূতপবিত্র করি। এ সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে।
এই রাতে যাদের দোয়া কবুল হবে না
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহপাক সর্বনি¤œ
আকাশে নেমে আসেন। সমস্ত ক্ষমা প্রার্থী মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন। তবে
মুশরিক, হিংসাকারী, রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ও ধর্ষণকারী ছাড়া আর যাদের ক্ষমা
করবেন না তারা হলেনÑ জাদুকর, গণক, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী, অশ্লীল গায়ক,
পরস্পর শত্রুতাভাব পোষণকারী, অত্যাচারী শাসক ও তার সহযোগী, মিথ্যা শপথে
পণ্য বিক্রয়কারী, মদ্যপ, পরস্ত্রীগামী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, কৃপণ,
পরোক্ষ নিন্দাকারী ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না।
আল্লাহ আমাদেরকে ওহাবী ফেতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
Copyright Daily Inqilab
Copyright Daily Inqilab
শবেবরাতের ইবাদতকে কোনো
অবস্থাতেই খাটো করে দেখা উচিত হবে না। যারা বলে শবেবরাত বলে কিছু নেই, এ
রাতে ইবাদত করা বিদআত, তারা সত্য সত্যই গোমরাহ। শয়তান তাদের দিয়ে মানুষকে
ইবাদতবিমুখ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ রাতে মানুষ পাক-সাফ হয়ে আল্লাহপাকরে ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে মসজিদে আসে
ইবাদত করতে। মনে করে যে, সারা বছর তো আল্লাহপাকের নাফরমানি করে করে
আমলনামায় পাপের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছি। আজকের এই মোবারক রাতে তওবা, ইস্তেগফার
করে আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক অবশ্যই ক্ষমা করে
দেবেন। কারণ হাদিসে কুদসিতে আছেÑ এ রাতে আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে এভাবে
ডাকতে থাকেন, ‘আছো কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।
আছো কি কোনো জীবিকা অন্বেষণকারী, যাকে আমি জীবিকা প্রদান করব। আছো কি কোনো
ব্যথিত, বিপদগ্রস্ত, যা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রত্যাশী, যাকে আমি সমস্ত
বিপদ-আপদ থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করব। আছো কি কোনো প্রার্থনকারী, আছো কিÑ
এভাবে মহান দয়ালু প্রেমময় আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে আহ্বান করতে থাকেন
সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত’। এই আশ্বাস বাণী আসার পর যখন কোনো লেবাসধারী
আলেম কাউকে ইবাদতের পুণ্য কাজ থেকে বিরত রেখে আবার জুয়ার আড্ডায় পাঠিয়ে
দেয়, তাদের স্থান কোথায় হবে আমার জানা নেই।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহপাক কখন বান্দার কোন ইবাদত কবুল করে নেন, কেউই বলতে
পারবেন না। কথিত আছে, একবার হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে সাক্ষাতের
জন্য কূহে তুরে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে দেখেন এক বৃদ্ধ লোক বলছেন ‘হে আল্লাহ
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমার সাথে কোনো কথা বল না, দেখাও দাও
না। হে আল্লাহ, তুমি যদি আমাকে দেখা দাও তাহলে আমি তোমাকে আমার ছাগলের দুধ
দিয়ে পেট ভরে খাইয়ে দিতাম। খুব দরদ দিয়ে সে এই কথাগুলো বলছিল। হযরত মূসা
(আ.) তার এই কথাগুলো শুনে দিল এক ধমক, ‘বেটা। তোর ছাগলের দুধ খেতে আল্লাহ
আসবে? তুই জানিস না, আল্লাহপাক পানাহার থেকে পবিত্র।’ সে মূসা (আ.)-এর এই
ধমক খেয়ে চুপ করে গেল। এদিকে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে কথা বলতে
গেলে আল্লাহপাক তাকে বললেন, আমার বান্দা আমার প্রতি পূর্ণবিশ্বাস নিয়ে এই
কথাগুলো বলতে ছিল। তখন আমি খুব আনন্দ অনুভব করতে ছিলাম, তুমি তাকে ধমক দিয়ে
ভুল করেছ।
একজন ঘৃণ্য, পাপী আল্লাহপাকের সৃষ্ট জীব একটি কুকুরকে পানি পান করিয়ে
আল্লাহপাকের খুশনুদী হাসিল করে ফেলেছিল, অর্থাৎ আল্লাহপাক বান্দার কোন
কাজটাকে পছন্দ করে ফেলেন, কেউ বলতে পারবে না। কাজেই আল্লাহর ওয়াস্তে
মানুষকে ইবাদতবিমুখ করবেন না।
এ রাত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস আছে। রাসূলে পাক (সা.) চারটির রাতকে
মর্যাদাপূর্ণ রাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। যথাÑ শবেকদর, শবেবরাত, শবেমিরাজ ও
শবে ঈদাইন। তার মধ্যে শবেবরাত অন্যতম।
এ রাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে হযরত মা আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “এক রাতে
রাসূলে পাক (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজে এত দীর্ঘ সেজদারত ছিলেন যে, আমি
সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম হয়তো রাসূলে পাক (সা.) এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে
গেছেন। আমি বিচলিত হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নাড়া
দিলাম। তাতে তিনি নড়ে উঠলেন। আমি নিশ্চিত হয়ে নিজ স্থানে চলে গেলাম। নামাজ
শেষ করে আমার সাথে কিছু কথা বলার পর ইরশাদ করলেন, হে আয়েশা আজ কোন রাত জান?
আমি বললাম, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই (সা.) অধিক জানেন। তিনি বললেন, আজ
শাবান মাসের ১৫তম রাত। এ রাতে আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীকে কৃপা করেন। এ রাতে
বিশ্ববাসীর তকদিরসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের নথিপত্র কার্যকর করার উদ্দেশ্যে
ফেরেশতাদের নিকট অর্পণ করেন। যার মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, হায়াত, রিজিক, দৌলত,
জয়-পরাজয়, মান-সম্মান, সুখ-দুঃখ উত্থান-পতন ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশিত থাকে।”
আল্লাহপাক বলেন, হা, মিম এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব
(কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রজনীতে
প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত করা হয়। (সূরা দুখান, আ. ১-৪)। এই
আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, পবিত্র কোরআন এই শবেবরাতে নাজিল হয়েছে। আবার সূরা
কদরে বলা হয়েছে, পবিত্র কোরআন কদরের রাতে নাজিল হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে
পারে, কোনটি সঠিক? সঠিক দুটোই। এর অর্থ হলোÑ আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন বরাতের
রাতে লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
অর্থাৎ সেখানে গিয়ে হযরত জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন যে, আমি আর উপরে উঠতে পারব
না। বোরাকও যাবে না। এখান থেকে আপনাকে একাই যেতে হবে রফরফে করে, তারপর
এখানে থেকে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে
রাসূলে পাক (সা.)-এর নিকট নাজিল করার কাজ শবেকদরে শুরু করেছেন। কারণ
সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর কার্যকর করা এক নয়। যেমনÑ সংসদে কোনো একটি আইন পাস
হওয়ার পর তা গেজেট আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে চলে আসে। তারপর তা কার্যকর করা
হয়। সুতরাং আজকের রাতটি হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাত। আগামী এক বছরের বাজেট এ
রাতেই পাস হয়ে যাবে। কাজেই বাজেট পাসের আগে যার যার মনের কামনা-বাসনা
আল্লাহপাকের দরবারে প্রেরণ করতে হবে। আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাদের সে
সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহপাক এ রাতে সর্বনি¤œ আকাশে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন
এবং আর্জি মঞ্জুর করে থাকেন। তাই বান্দার কাজ হলো এ রাতে মনের যত
কামনা-বাসনা তার নিকট পেশ করা। এ সূবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার জন্যই কিছু
সংখ্যক মুখোশধারী আলেমকে খারিজিরা নিযুক্ত করেছে। সাবধান, তাদের খপ্পরে
পড়ে ঈমান, আমল এবং এ সুবর্ণ সুযোগ থেকে মাহরুম হবেন না। আল্লাহপাক বলেন,
আমি বান্দাকে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। বান্দা চাইলেই আমি দিয়ে
দেব।
শবেবরাতের আমল
শবেবরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। তবে নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ
যেভাবে পড়া হয়, সেভাবেই বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে হবে। যে কোনো সূরা
দিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন। তবে ইবাদত ও নামাজে আন্তরিকতা ও একাগ্রতা থাকতে
হবে। নামাজে ক্লান্তি এসে গেলে জিকির-আজকার অথবা কোরআন তেলাওয়াত করতে
পারেন। মনে রাখবেন, আল্লাহপাক সাধ্যাতীত ইবাদত পছন্দ করেন না। ইবাদতের
সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে আন্তরিকতা খুশুখুজু বৃদ্ধির প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া
উচিত। মহব্বতের সাথে অল্প ইবাদত গাফিলতির সাথে অসংখ্য ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়। এ
রাতে বেশি বেশি করতে তওবা করতে হবে। তওবার অনুতাপ অনুশোচনা থাকতে হবে।
নির্জনে বসে জীবনের সমস্ত গোনাহের কথা মনে করে লজ্জায় কাতর হয়ে কাঁদতে হবে।
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, পাপী বান্দার চোখের পানি আল্লাহপাকের ক্রোধাগ্নিকে
নিভিয়ে দেয়।
শবেবরাতের দোয়া
হযরত মা আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি হুজুরকে না পেয়ে মনে করলাম তিনি
হয়তো অন্য বিবির ঘরে আছেন। আমি তখন তাঁকে খোঁজার জন্য উঠলাম। এমন সময় আমার
হাত তাঁর পা মোবারক স্পর্শ করল। আমি দেখলাম, তিনি সেজদারত আছেন এবং এই
দোয়াটি পড়ছেন, “হে আল্লাহ আমার শরীর এবং আমার অন্তর তোমাকে সেজদা করছে।
আমার অন্তর তোমার প্রতি ঈমান এনেছে। আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করছি। আমি
আমার জীবনের ওপর জুলুম করেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। তুমি ছাড়া গোনাহ মাফ
করার কেউ নেই। আমি তোমার আজাব থেকে বাঁচার জন্য তোমার আশ্রয় চাই। তোমার
ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য তোমার রেজামন্দি চাই। তোমার আজাব থেকে নিরাপদ থাকার
জন্য তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে কেউ শেষ করতে
পারবে না। তুমি নিজেই তোমার প্রশংসা করছ। আর তুমিই তোমার প্রশংসা করার
ক্ষমতা রাখ। অন্য কেউ তোমার অনুগ্রহ ছাড়া পারে না।”
মা আয়েশা (রা.) আরো বলেন, রাসূলে খোদা কখনও দাঁড়িয়ে যেতেন, আবার কখনও বসে
পড়তেন। এভাবে সকাল হয়ে যেত। এ জন্য রাসূলে পাক (সা.)-এর পা ফুলে গিয়েছিল।
আমি তার পায়ে ফুঁ দিতে দিতে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমার মা-বাপ
আপনার ওপর কোরবান হোক। আপনার আগ-পিছের সমস্ত গোনাহ আল্লাহপাক মাফ করে
দিয়েছেন। তারপরও আপনি কেন এভাবে কষ্ট করছেন? তখন রাসূলে পাক (সা.) বললেন,
আমি কি আল্লাহপাকের শোকর আদায় করব না? যিনি সমস্ত গোনাহ থেকে পবিত্র, তিনি
যদি এভাবে কান্নাকাটি করতে পারেন, সে হিসেবে আমরা কি করছি? আমরা কি এই
বরকতময় রাত পেয়ে আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছি? তাই আসুন,
কতিপয় সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করে এবং খাঁটি তওবার মাধ্যমে নিজেদেরকে
পূতপবিত্র করি। এ সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে।
এই রাতে যাদের দোয়া কবুল হবে না
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহপাক সর্বনি¤œ
আকাশে নেমে আসেন। সমস্ত ক্ষমা প্রার্থী মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন। তবে
মুশরিক, হিংসাকারী, রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ও ধর্ষণকারী ছাড়া আর যাদের ক্ষমা
করবেন না তারা হলেনÑ জাদুকর, গণক, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী, অশ্লীল গায়ক,
পরস্পর শত্রুতাভাব পোষণকারী, অত্যাচারী শাসক ও তার সহযোগী, মিথ্যা শপথে
পণ্য বিক্রয়কারী, মদ্যপ, পরস্ত্রীগামী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, কৃপণ,
পরোক্ষ নিন্দাকারী ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না।
আল্লাহ আমাদেরকে ওহাবী ফেতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
Copyright Daily Inqilab
Copyright Daily Inqilab
শবেবরাতের ইবাদতকে কোনো
অবস্থাতেই খাটো করে দেখা উচিত হবে না। যারা বলে শবেবরাত বলে কিছু নেই, এ
রাতে ইবাদত করা বিদআত, তারা সত্য সত্যই গোমরাহ। শয়তান তাদের দিয়ে মানুষকে
ইবাদতবিমুখ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ রাতে মানুষ পাক-সাফ হয়ে আল্লাহপাকরে ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে মসজিদে আসে
ইবাদত করতে। মনে করে যে, সারা বছর তো আল্লাহপাকের নাফরমানি করে করে
আমলনামায় পাপের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছি। আজকের এই মোবারক রাতে তওবা, ইস্তেগফার
করে আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক অবশ্যই ক্ষমা করে
দেবেন। কারণ হাদিসে কুদসিতে আছেÑ এ রাতে আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে এভাবে
ডাকতে থাকেন, ‘আছো কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।
আছো কি কোনো জীবিকা অন্বেষণকারী, যাকে আমি জীবিকা প্রদান করব। আছো কি কোনো
ব্যথিত, বিপদগ্রস্ত, যা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রত্যাশী, যাকে আমি সমস্ত
বিপদ-আপদ থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করব। আছো কি কোনো প্রার্থনকারী, আছো কিÑ
এভাবে মহান দয়ালু প্রেমময় আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে আহ্বান করতে থাকেন
সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত’। এই আশ্বাস বাণী আসার পর যখন কোনো লেবাসধারী
আলেম কাউকে ইবাদতের পুণ্য কাজ থেকে বিরত রেখে আবার জুয়ার আড্ডায় পাঠিয়ে
দেয়, তাদের স্থান কোথায় হবে আমার জানা নেই।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহপাক কখন বান্দার কোন ইবাদত কবুল করে নেন, কেউই বলতে
পারবেন না। কথিত আছে, একবার হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে সাক্ষাতের
জন্য কূহে তুরে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে দেখেন এক বৃদ্ধ লোক বলছেন ‘হে আল্লাহ
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমার সাথে কোনো কথা বল না, দেখাও দাও
না। হে আল্লাহ, তুমি যদি আমাকে দেখা দাও তাহলে আমি তোমাকে আমার ছাগলের দুধ
দিয়ে পেট ভরে খাইয়ে দিতাম। খুব দরদ দিয়ে সে এই কথাগুলো বলছিল। হযরত মূসা
(আ.) তার এই কথাগুলো শুনে দিল এক ধমক, ‘বেটা। তোর ছাগলের দুধ খেতে আল্লাহ
আসবে? তুই জানিস না, আল্লাহপাক পানাহার থেকে পবিত্র।’ সে মূসা (আ.)-এর এই
ধমক খেয়ে চুপ করে গেল। এদিকে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে কথা বলতে
গেলে আল্লাহপাক তাকে বললেন, আমার বান্দা আমার প্রতি পূর্ণবিশ্বাস নিয়ে এই
কথাগুলো বলতে ছিল। তখন আমি খুব আনন্দ অনুভব করতে ছিলাম, তুমি তাকে ধমক দিয়ে
ভুল করেছ।
একজন ঘৃণ্য, পাপী আল্লাহপাকের সৃষ্ট জীব একটি কুকুরকে পানি পান করিয়ে
আল্লাহপাকের খুশনুদী হাসিল করে ফেলেছিল, অর্থাৎ আল্লাহপাক বান্দার কোন
কাজটাকে পছন্দ করে ফেলেন, কেউ বলতে পারবে না। কাজেই আল্লাহর ওয়াস্তে
মানুষকে ইবাদতবিমুখ করবেন না।
এ রাত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস আছে। রাসূলে পাক (সা.) চারটির রাতকে
মর্যাদাপূর্ণ রাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। যথাÑ শবেকদর, শবেবরাত, শবেমিরাজ ও
শবে ঈদাইন। তার মধ্যে শবেবরাত অন্যতম।
এ রাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে হযরত মা আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “এক রাতে
রাসূলে পাক (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজে এত দীর্ঘ সেজদারত ছিলেন যে, আমি
সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম হয়তো রাসূলে পাক (সা.) এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে
গেছেন। আমি বিচলিত হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নাড়া
দিলাম। তাতে তিনি নড়ে উঠলেন। আমি নিশ্চিত হয়ে নিজ স্থানে চলে গেলাম। নামাজ
শেষ করে আমার সাথে কিছু কথা বলার পর ইরশাদ করলেন, হে আয়েশা আজ কোন রাত জান?
আমি বললাম, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই (সা.) অধিক জানেন। তিনি বললেন, আজ
শাবান মাসের ১৫তম রাত। এ রাতে আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীকে কৃপা করেন। এ রাতে
বিশ্ববাসীর তকদিরসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের নথিপত্র কার্যকর করার উদ্দেশ্যে
ফেরেশতাদের নিকট অর্পণ করেন। যার মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, হায়াত, রিজিক, দৌলত,
জয়-পরাজয়, মান-সম্মান, সুখ-দুঃখ উত্থান-পতন ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশিত থাকে।”
আল্লাহপাক বলেন, হা, মিম এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব
(কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রজনীতে
প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত করা হয়। (সূরা দুখান, আ. ১-৪)। এই
আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, পবিত্র কোরআন এই শবেবরাতে নাজিল হয়েছে। আবার সূরা
কদরে বলা হয়েছে, পবিত্র কোরআন কদরের রাতে নাজিল হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে
পারে, কোনটি সঠিক? সঠিক দুটোই। এর অর্থ হলোÑ আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন বরাতের
রাতে লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
অর্থাৎ সেখানে গিয়ে হযরত জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন যে, আমি আর উপরে উঠতে পারব
না। বোরাকও যাবে না। এখান থেকে আপনাকে একাই যেতে হবে রফরফে করে, তারপর
এখানে থেকে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে
রাসূলে পাক (সা.)-এর নিকট নাজিল করার কাজ শবেকদরে শুরু করেছেন। কারণ
সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর কার্যকর করা এক নয়। যেমনÑ সংসদে কোনো একটি আইন পাস
হওয়ার পর তা গেজেট আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে চলে আসে। তারপর তা কার্যকর করা
হয়। সুতরাং আজকের রাতটি হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাত। আগামী এক বছরের বাজেট এ
রাতেই পাস হয়ে যাবে। কাজেই বাজেট পাসের আগে যার যার মনের কামনা-বাসনা
আল্লাহপাকের দরবারে প্রেরণ করতে হবে। আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাদের সে
সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহপাক এ রাতে সর্বনি¤œ আকাশে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন
এবং আর্জি মঞ্জুর করে থাকেন। তাই বান্দার কাজ হলো এ রাতে মনের যত
কামনা-বাসনা তার নিকট পেশ করা। এ সূবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার জন্যই কিছু
সংখ্যক মুখোশধারী আলেমকে খারিজিরা নিযুক্ত করেছে। সাবধান, তাদের খপ্পরে
পড়ে ঈমান, আমল এবং এ সুবর্ণ সুযোগ থেকে মাহরুম হবেন না। আল্লাহপাক বলেন,
আমি বান্দাকে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। বান্দা চাইলেই আমি দিয়ে
দেব।
শবেবরাতের আমল
শবেবরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। তবে নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ
যেভাবে পড়া হয়, সেভাবেই বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে হবে। যে কোনো সূরা
দিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন। তবে ইবাদত ও নামাজে আন্তরিকতা ও একাগ্রতা থাকতে
হবে। নামাজে ক্লান্তি এসে গেলে জিকির-আজকার অথবা কোরআন তেলাওয়াত করতে
পারেন। মনে রাখবেন, আল্লাহপাক সাধ্যাতীত ইবাদত পছন্দ করেন না। ইবাদতের
সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে আন্তরিকতা খুশুখুজু বৃদ্ধির প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া
উচিত। মহব্বতের সাথে অল্প ইবাদত গাফিলতির সাথে অসংখ্য ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়। এ
রাতে বেশি বেশি করতে তওবা করতে হবে। তওবার অনুতাপ অনুশোচনা থাকতে হবে।
নির্জনে বসে জীবনের সমস্ত গোনাহের কথা মনে করে লজ্জায় কাতর হয়ে কাঁদতে হবে।
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, পাপী বান্দার চোখের পানি আল্লাহপাকের ক্রোধাগ্নিকে
নিভিয়ে দেয়।
শবেবরাতের দোয়া
হযরত মা আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি হুজুরকে না পেয়ে মনে করলাম তিনি
হয়তো অন্য বিবির ঘরে আছেন। আমি তখন তাঁকে খোঁজার জন্য উঠলাম। এমন সময় আমার
হাত তাঁর পা মোবারক স্পর্শ করল। আমি দেখলাম, তিনি সেজদারত আছেন এবং এই
দোয়াটি পড়ছেন, “হে আল্লাহ আমার শরীর এবং আমার অন্তর তোমাকে সেজদা করছে।
আমার অন্তর তোমার প্রতি ঈমান এনেছে। আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করছি। আমি
আমার জীবনের ওপর জুলুম করেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। তুমি ছাড়া গোনাহ মাফ
করার কেউ নেই। আমি তোমার আজাব থেকে বাঁচার জন্য তোমার আশ্রয় চাই। তোমার
ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য তোমার রেজামন্দি চাই। তোমার আজাব থেকে নিরাপদ থাকার
জন্য তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে কেউ শেষ করতে
পারবে না। তুমি নিজেই তোমার প্রশংসা করছ। আর তুমিই তোমার প্রশংসা করার
ক্ষমতা রাখ। অন্য কেউ তোমার অনুগ্রহ ছাড়া পারে না।”
মা আয়েশা (রা.) আরো বলেন, রাসূলে খোদা কখনও দাঁড়িয়ে যেতেন, আবার কখনও বসে
পড়তেন। এভাবে সকাল হয়ে যেত। এ জন্য রাসূলে পাক (সা.)-এর পা ফুলে গিয়েছিল।
আমি তার পায়ে ফুঁ দিতে দিতে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমার মা-বাপ
আপনার ওপর কোরবান হোক। আপনার আগ-পিছের সমস্ত গোনাহ আল্লাহপাক মাফ করে
দিয়েছেন। তারপরও আপনি কেন এভাবে কষ্ট করছেন? তখন রাসূলে পাক (সা.) বললেন,
আমি কি আল্লাহপাকের শোকর আদায় করব না? যিনি সমস্ত গোনাহ থেকে পবিত্র, তিনি
যদি এভাবে কান্নাকাটি করতে পারেন, সে হিসেবে আমরা কি করছি? আমরা কি এই
বরকতময় রাত পেয়ে আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছি? তাই আসুন,
কতিপয় সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করে এবং খাঁটি তওবার মাধ্যমে নিজেদেরকে
পূতপবিত্র করি। এ সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে।
এই রাতে যাদের দোয়া কবুল হবে না
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহপাক সর্বনি¤œ
আকাশে নেমে আসেন। সমস্ত ক্ষমা প্রার্থী মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন। তবে
মুশরিক, হিংসাকারী, রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ও ধর্ষণকারী ছাড়া আর যাদের ক্ষমা
করবেন না তারা হলেনÑ জাদুকর, গণক, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী, অশ্লীল গায়ক,
পরস্পর শত্রুতাভাব পোষণকারী, অত্যাচারী শাসক ও তার সহযোগী, মিথ্যা শপথে
পণ্য বিক্রয়কারী, মদ্যপ, পরস্ত্রীগামী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, কৃপণ,
পরোক্ষ নিন্দাকারী ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না।
আল্লাহ আমাদেরকে ওহাবী ফেতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
Copyright Daily Inqilab
Copyright Daily Inqilab
শবেবরাতের ইবাদতকে কোনো
অবস্থাতেই খাটো করে দেখা উচিত হবে না। যারা বলে শবেবরাত বলে কিছু নেই, এ
রাতে ইবাদত করা বিদআত, তারা সত্য সত্যই গোমরাহ। শয়তান তাদের দিয়ে মানুষকে
ইবাদতবিমুখ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ রাতে মানুষ পাক-সাফ হয়ে আল্লাহপাকরে ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে মসজিদে আসে
ইবাদত করতে। মনে করে যে, সারা বছর তো আল্লাহপাকের নাফরমানি করে করে
আমলনামায় পাপের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছি। আজকের এই মোবারক রাতে তওবা, ইস্তেগফার
করে আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক অবশ্যই ক্ষমা করে
দেবেন। কারণ হাদিসে কুদসিতে আছেÑ এ রাতে আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে এভাবে
ডাকতে থাকেন, ‘আছো কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।
আছো কি কোনো জীবিকা অন্বেষণকারী, যাকে আমি জীবিকা প্রদান করব। আছো কি কোনো
ব্যথিত, বিপদগ্রস্ত, যা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রত্যাশী, যাকে আমি সমস্ত
বিপদ-আপদ থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করব। আছো কি কোনো প্রার্থনকারী, আছো কিÑ
এভাবে মহান দয়ালু প্রেমময় আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে আহ্বান করতে থাকেন
সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত’। এই আশ্বাস বাণী আসার পর যখন কোনো লেবাসধারী
আলেম কাউকে ইবাদতের পুণ্য কাজ থেকে বিরত রেখে আবার জুয়ার আড্ডায় পাঠিয়ে
দেয়, তাদের স্থান কোথায় হবে আমার জানা নেই।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহপাক কখন বান্দার কোন ইবাদত কবুল করে নেন, কেউই বলতে
পারবেন না। কথিত আছে, একবার হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে সাক্ষাতের
জন্য কূহে তুরে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে দেখেন এক বৃদ্ধ লোক বলছেন ‘হে আল্লাহ
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমার সাথে কোনো কথা বল না, দেখাও দাও
না। হে আল্লাহ, তুমি যদি আমাকে দেখা দাও তাহলে আমি তোমাকে আমার ছাগলের দুধ
দিয়ে পেট ভরে খাইয়ে দিতাম। খুব দরদ দিয়ে সে এই কথাগুলো বলছিল। হযরত মূসা
(আ.) তার এই কথাগুলো শুনে দিল এক ধমক, ‘বেটা। তোর ছাগলের দুধ খেতে আল্লাহ
আসবে? তুই জানিস না, আল্লাহপাক পানাহার থেকে পবিত্র।’ সে মূসা (আ.)-এর এই
ধমক খেয়ে চুপ করে গেল। এদিকে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে কথা বলতে
গেলে আল্লাহপাক তাকে বললেন, আমার বান্দা আমার প্রতি পূর্ণবিশ্বাস নিয়ে এই
কথাগুলো বলতে ছিল। তখন আমি খুব আনন্দ অনুভব করতে ছিলাম, তুমি তাকে ধমক দিয়ে
ভুল করেছ।
একজন ঘৃণ্য, পাপী আল্লাহপাকের সৃষ্ট জীব একটি কুকুরকে পানি পান করিয়ে
আল্লাহপাকের খুশনুদী হাসিল করে ফেলেছিল, অর্থাৎ আল্লাহপাক বান্দার কোন
কাজটাকে পছন্দ করে ফেলেন, কেউ বলতে পারবে না। কাজেই আল্লাহর ওয়াস্তে
মানুষকে ইবাদতবিমুখ করবেন না।
এ রাত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস আছে। রাসূলে পাক (সা.) চারটির রাতকে
মর্যাদাপূর্ণ রাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। যথাÑ শবেকদর, শবেবরাত, শবেমিরাজ ও
শবে ঈদাইন। তার মধ্যে শবেবরাত অন্যতম।
এ রাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে হযরত মা আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “এক রাতে
রাসূলে পাক (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজে এত দীর্ঘ সেজদারত ছিলেন যে, আমি
সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম হয়তো রাসূলে পাক (সা.) এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে
গেছেন। আমি বিচলিত হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নাড়া
দিলাম। তাতে তিনি নড়ে উঠলেন। আমি নিশ্চিত হয়ে নিজ স্থানে চলে গেলাম। নামাজ
শেষ করে আমার সাথে কিছু কথা বলার পর ইরশাদ করলেন, হে আয়েশা আজ কোন রাত জান?
আমি বললাম, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই (সা.) অধিক জানেন। তিনি বললেন, আজ
শাবান মাসের ১৫তম রাত। এ রাতে আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীকে কৃপা করেন। এ রাতে
বিশ্ববাসীর তকদিরসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের নথিপত্র কার্যকর করার উদ্দেশ্যে
ফেরেশতাদের নিকট অর্পণ করেন। যার মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, হায়াত, রিজিক, দৌলত,
জয়-পরাজয়, মান-সম্মান, সুখ-দুঃখ উত্থান-পতন ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশিত থাকে।”
আল্লাহপাক বলেন, হা, মিম এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব
(কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রজনীতে
প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত করা হয়। (সূরা দুখান, আ. ১-৪)। এই
আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, পবিত্র কোরআন এই শবেবরাতে নাজিল হয়েছে। আবার সূরা
কদরে বলা হয়েছে, পবিত্র কোরআন কদরের রাতে নাজিল হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে
পারে, কোনটি সঠিক? সঠিক দুটোই। এর অর্থ হলোÑ আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন বরাতের
রাতে লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
অর্থাৎ সেখানে গিয়ে হযরত জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন যে, আমি আর উপরে উঠতে পারব
না। বোরাকও যাবে না। এখান থেকে আপনাকে একাই যেতে হবে রফরফে করে, তারপর
এখানে থেকে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে
রাসূলে পাক (সা.)-এর নিকট নাজিল করার কাজ শবেকদরে শুরু করেছেন। কারণ
সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর কার্যকর করা এক নয়। যেমনÑ সংসদে কোনো একটি আইন পাস
হওয়ার পর তা গেজেট আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে চলে আসে। তারপর তা কার্যকর করা
হয়। সুতরাং আজকের রাতটি হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাত। আগামী এক বছরের বাজেট এ
রাতেই পাস হয়ে যাবে। কাজেই বাজেট পাসের আগে যার যার মনের কামনা-বাসনা
আল্লাহপাকের দরবারে প্রেরণ করতে হবে। আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাদের সে
সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহপাক এ রাতে সর্বনি¤œ আকাশে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন
এবং আর্জি মঞ্জুর করে থাকেন। তাই বান্দার কাজ হলো এ রাতে মনের যত
কামনা-বাসনা তার নিকট পেশ করা। এ সূবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার জন্যই কিছু
সংখ্যক মুখোশধারী আলেমকে খারিজিরা নিযুক্ত করেছে। সাবধান, তাদের খপ্পরে
পড়ে ঈমান, আমল এবং এ সুবর্ণ সুযোগ থেকে মাহরুম হবেন না। আল্লাহপাক বলেন,
আমি বান্দাকে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। বান্দা চাইলেই আমি দিয়ে
দেব।
শবেবরাতের আমল
শবেবরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। তবে নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ
যেভাবে পড়া হয়, সেভাবেই বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে হবে। যে কোনো সূরা
দিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন। তবে ইবাদত ও নামাজে আন্তরিকতা ও একাগ্রতা থাকতে
হবে। নামাজে ক্লান্তি এসে গেলে জিকির-আজকার অথবা কোরআন তেলাওয়াত করতে
পারেন। মনে রাখবেন, আল্লাহপাক সাধ্যাতীত ইবাদত পছন্দ করেন না। ইবাদতের
সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে আন্তরিকতা খুশুখুজু বৃদ্ধির প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া
উচিত। মহব্বতের সাথে অল্প ইবাদত গাফিলতির সাথে অসংখ্য ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়। এ
রাতে বেশি বেশি করতে তওবা করতে হবে। তওবার অনুতাপ অনুশোচনা থাকতে হবে।
নির্জনে বসে জীবনের সমস্ত গোনাহের কথা মনে করে লজ্জায় কাতর হয়ে কাঁদতে হবে।
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, পাপী বান্দার চোখের পানি আল্লাহপাকের ক্রোধাগ্নিকে
নিভিয়ে দেয়।
শবেবরাতের দোয়া
হযরত মা আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি হুজুরকে না পেয়ে মনে করলাম তিনি
হয়তো অন্য বিবির ঘরে আছেন। আমি তখন তাঁকে খোঁজার জন্য উঠলাম। এমন সময় আমার
হাত তাঁর পা মোবারক স্পর্শ করল। আমি দেখলাম, তিনি সেজদারত আছেন এবং এই
দোয়াটি পড়ছেন, “হে আল্লাহ আমার শরীর এবং আমার অন্তর তোমাকে সেজদা করছে।
আমার অন্তর তোমার প্রতি ঈমান এনেছে। আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করছি। আমি
আমার জীবনের ওপর জুলুম করেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। তুমি ছাড়া গোনাহ মাফ
করার কেউ নেই। আমি তোমার আজাব থেকে বাঁচার জন্য তোমার আশ্রয় চাই। তোমার
ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য তোমার রেজামন্দি চাই। তোমার আজাব থেকে নিরাপদ থাকার
জন্য তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে কেউ শেষ করতে
পারবে না। তুমি নিজেই তোমার প্রশংসা করছ। আর তুমিই তোমার প্রশংসা করার
ক্ষমতা রাখ। অন্য কেউ তোমার অনুগ্রহ ছাড়া পারে না।”
মা আয়েশা (রা.) আরো বলেন, রাসূলে খোদা কখনও দাঁড়িয়ে যেতেন, আবার কখনও বসে
পড়তেন। এভাবে সকাল হয়ে যেত। এ জন্য রাসূলে পাক (সা.)-এর পা ফুলে গিয়েছিল।
আমি তার পায়ে ফুঁ দিতে দিতে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমার মা-বাপ
আপনার ওপর কোরবান হোক। আপনার আগ-পিছের সমস্ত গোনাহ আল্লাহপাক মাফ করে
দিয়েছেন। তারপরও আপনি কেন এভাবে কষ্ট করছেন? তখন রাসূলে পাক (সা.) বললেন,
আমি কি আল্লাহপাকের শোকর আদায় করব না? যিনি সমস্ত গোনাহ থেকে পবিত্র, তিনি
যদি এভাবে কান্নাকাটি করতে পারেন, সে হিসেবে আমরা কি করছি? আমরা কি এই
বরকতময় রাত পেয়ে আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছি? তাই আসুন,
কতিপয় সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করে এবং খাঁটি তওবার মাধ্যমে নিজেদেরকে
পূতপবিত্র করি। এ সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে।
এই রাতে যাদের দোয়া কবুল হবে না
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহপাক সর্বনি¤œ
আকাশে নেমে আসেন। সমস্ত ক্ষমা প্রার্থী মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন। তবে
মুশরিক, হিংসাকারী, রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ও ধর্ষণকারী ছাড়া আর যাদের ক্ষমা
করবেন না তারা হলেনÑ জাদুকর, গণক, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী, অশ্লীল গায়ক,
পরস্পর শত্রুতাভাব পোষণকারী, অত্যাচারী শাসক ও তার সহযোগী, মিথ্যা শপথে
পণ্য বিক্রয়কারী, মদ্যপ, পরস্ত্রীগামী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, কৃপণ,
পরোক্ষ নিন্দাকারী ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না।
আল্লাহ আমাদেরকে ওহাবী ফেতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
Copyright Daily Inqilab
Copyright Daily Inqilab
শবেবরাতের ইবাদতকে কোনো
অবস্থাতেই খাটো করে দেখা উচিত হবে না। যারা বলে শবেবরাত বলে কিছু নেই, এ
রাতে ইবাদত করা বিদআত, তারা সত্য সত্যই গোমরাহ। শয়তান তাদের দিয়ে মানুষকে
ইবাদতবিমুখ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ রাতে মানুষ পাক-সাফ হয়ে আল্লাহপাকরে ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে মসজিদে আসে
ইবাদত করতে। মনে করে যে, সারা বছর তো আল্লাহপাকের নাফরমানি করে করে
আমলনামায় পাপের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছি। আজকের এই মোবারক রাতে তওবা, ইস্তেগফার
করে আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক অবশ্যই ক্ষমা করে
দেবেন। কারণ হাদিসে কুদসিতে আছেÑ এ রাতে আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে এভাবে
ডাকতে থাকেন, ‘আছো কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।
আছো কি কোনো জীবিকা অন্বেষণকারী, যাকে আমি জীবিকা প্রদান করব। আছো কি কোনো
ব্যথিত, বিপদগ্রস্ত, যা থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রত্যাশী, যাকে আমি সমস্ত
বিপদ-আপদ থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করব। আছো কি কোনো প্রার্থনকারী, আছো কিÑ
এভাবে মহান দয়ালু প্রেমময় আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে আহ্বান করতে থাকেন
সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত’। এই আশ্বাস বাণী আসার পর যখন কোনো লেবাসধারী
আলেম কাউকে ইবাদতের পুণ্য কাজ থেকে বিরত রেখে আবার জুয়ার আড্ডায় পাঠিয়ে
দেয়, তাদের স্থান কোথায় হবে আমার জানা নেই।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহপাক কখন বান্দার কোন ইবাদত কবুল করে নেন, কেউই বলতে
পারবেন না। কথিত আছে, একবার হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে সাক্ষাতের
জন্য কূহে তুরে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে দেখেন এক বৃদ্ধ লোক বলছেন ‘হে আল্লাহ
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমার সাথে কোনো কথা বল না, দেখাও দাও
না। হে আল্লাহ, তুমি যদি আমাকে দেখা দাও তাহলে আমি তোমাকে আমার ছাগলের দুধ
দিয়ে পেট ভরে খাইয়ে দিতাম। খুব দরদ দিয়ে সে এই কথাগুলো বলছিল। হযরত মূসা
(আ.) তার এই কথাগুলো শুনে দিল এক ধমক, ‘বেটা। তোর ছাগলের দুধ খেতে আল্লাহ
আসবে? তুই জানিস না, আল্লাহপাক পানাহার থেকে পবিত্র।’ সে মূসা (আ.)-এর এই
ধমক খেয়ে চুপ করে গেল। এদিকে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহপাকের সাথে কথা বলতে
গেলে আল্লাহপাক তাকে বললেন, আমার বান্দা আমার প্রতি পূর্ণবিশ্বাস নিয়ে এই
কথাগুলো বলতে ছিল। তখন আমি খুব আনন্দ অনুভব করতে ছিলাম, তুমি তাকে ধমক দিয়ে
ভুল করেছ।
একজন ঘৃণ্য, পাপী আল্লাহপাকের সৃষ্ট জীব একটি কুকুরকে পানি পান করিয়ে
আল্লাহপাকের খুশনুদী হাসিল করে ফেলেছিল, অর্থাৎ আল্লাহপাক বান্দার কোন
কাজটাকে পছন্দ করে ফেলেন, কেউ বলতে পারবে না। কাজেই আল্লাহর ওয়াস্তে
মানুষকে ইবাদতবিমুখ করবেন না।
এ রাত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস আছে। রাসূলে পাক (সা.) চারটির রাতকে
মর্যাদাপূর্ণ রাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। যথাÑ শবেকদর, শবেবরাত, শবেমিরাজ ও
শবে ঈদাইন। তার মধ্যে শবেবরাত অন্যতম।
এ রাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে হযরত মা আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “এক রাতে
রাসূলে পাক (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজে এত দীর্ঘ সেজদারত ছিলেন যে, আমি
সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম হয়তো রাসূলে পাক (সা.) এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে
গেছেন। আমি বিচলিত হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নাড়া
দিলাম। তাতে তিনি নড়ে উঠলেন। আমি নিশ্চিত হয়ে নিজ স্থানে চলে গেলাম। নামাজ
শেষ করে আমার সাথে কিছু কথা বলার পর ইরশাদ করলেন, হে আয়েশা আজ কোন রাত জান?
আমি বললাম, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই (সা.) অধিক জানেন। তিনি বললেন, আজ
শাবান মাসের ১৫তম রাত। এ রাতে আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীকে কৃপা করেন। এ রাতে
বিশ্ববাসীর তকদিরসম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের নথিপত্র কার্যকর করার উদ্দেশ্যে
ফেরেশতাদের নিকট অর্পণ করেন। যার মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, হায়াত, রিজিক, দৌলত,
জয়-পরাজয়, মান-সম্মান, সুখ-দুঃখ উত্থান-পতন ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশিত থাকে।”
আল্লাহপাক বলেন, হা, মিম এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব
(কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রজনীতে
প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত করা হয়। (সূরা দুখান, আ. ১-৪)। এই
আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, পবিত্র কোরআন এই শবেবরাতে নাজিল হয়েছে। আবার সূরা
কদরে বলা হয়েছে, পবিত্র কোরআন কদরের রাতে নাজিল হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে
পারে, কোনটি সঠিক? সঠিক দুটোই। এর অর্থ হলোÑ আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন বরাতের
রাতে লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
অর্থাৎ সেখানে গিয়ে হযরত জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন যে, আমি আর উপরে উঠতে পারব
না। বোরাকও যাবে না। এখান থেকে আপনাকে একাই যেতে হবে রফরফে করে, তারপর
এখানে থেকে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে
রাসূলে পাক (সা.)-এর নিকট নাজিল করার কাজ শবেকদরে শুরু করেছেন। কারণ
সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর কার্যকর করা এক নয়। যেমনÑ সংসদে কোনো একটি আইন পাস
হওয়ার পর তা গেজেট আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে চলে আসে। তারপর তা কার্যকর করা
হয়। সুতরাং আজকের রাতটি হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাত। আগামী এক বছরের বাজেট এ
রাতেই পাস হয়ে যাবে। কাজেই বাজেট পাসের আগে যার যার মনের কামনা-বাসনা
আল্লাহপাকের দরবারে প্রেরণ করতে হবে। আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাদের সে
সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহপাক এ রাতে সর্বনি¤œ আকাশে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন
এবং আর্জি মঞ্জুর করে থাকেন। তাই বান্দার কাজ হলো এ রাতে মনের যত
কামনা-বাসনা তার নিকট পেশ করা। এ সূবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার জন্যই কিছু
সংখ্যক মুখোশধারী আলেমকে খারিজিরা নিযুক্ত করেছে। সাবধান, তাদের খপ্পরে
পড়ে ঈমান, আমল এবং এ সুবর্ণ সুযোগ থেকে মাহরুম হবেন না। আল্লাহপাক বলেন,
আমি বান্দাকে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। বান্দা চাইলেই আমি দিয়ে
দেব।
শবেবরাতের আমল
শবেবরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। তবে নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ
যেভাবে পড়া হয়, সেভাবেই বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়তে হবে। যে কোনো সূরা
দিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন। তবে ইবাদত ও নামাজে আন্তরিকতা ও একাগ্রতা থাকতে
হবে। নামাজে ক্লান্তি এসে গেলে জিকির-আজকার অথবা কোরআন তেলাওয়াত করতে
পারেন। মনে রাখবেন, আল্লাহপাক সাধ্যাতীত ইবাদত পছন্দ করেন না। ইবাদতের
সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে আন্তরিকতা খুশুখুজু বৃদ্ধির প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া
উচিত। মহব্বতের সাথে অল্প ইবাদত গাফিলতির সাথে অসংখ্য ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়। এ
রাতে বেশি বেশি করতে তওবা করতে হবে। তওবার অনুতাপ অনুশোচনা থাকতে হবে।
নির্জনে বসে জীবনের সমস্ত গোনাহের কথা মনে করে লজ্জায় কাতর হয়ে কাঁদতে হবে।
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, পাপী বান্দার চোখের পানি আল্লাহপাকের ক্রোধাগ্নিকে
নিভিয়ে দেয়।
শবেবরাতের দোয়া
হযরত মা আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি হুজুরকে না পেয়ে মনে করলাম তিনি
হয়তো অন্য বিবির ঘরে আছেন। আমি তখন তাঁকে খোঁজার জন্য উঠলাম। এমন সময় আমার
হাত তাঁর পা মোবারক স্পর্শ করল। আমি দেখলাম, তিনি সেজদারত আছেন এবং এই
দোয়াটি পড়ছেন, “হে আল্লাহ আমার শরীর এবং আমার অন্তর তোমাকে সেজদা করছে।
আমার অন্তর তোমার প্রতি ঈমান এনেছে। আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করছি। আমি
আমার জীবনের ওপর জুলুম করেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। তুমি ছাড়া গোনাহ মাফ
করার কেউ নেই। আমি তোমার আজাব থেকে বাঁচার জন্য তোমার আশ্রয় চাই। তোমার
ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য তোমার রেজামন্দি চাই। তোমার আজাব থেকে নিরাপদ থাকার
জন্য তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে কেউ শেষ করতে
পারবে না। তুমি নিজেই তোমার প্রশংসা করছ। আর তুমিই তোমার প্রশংসা করার
ক্ষমতা রাখ। অন্য কেউ তোমার অনুগ্রহ ছাড়া পারে না।”
মা আয়েশা (রা.) আরো বলেন, রাসূলে খোদা কখনও দাঁড়িয়ে যেতেন, আবার কখনও বসে
পড়তেন। এভাবে সকাল হয়ে যেত। এ জন্য রাসূলে পাক (সা.)-এর পা ফুলে গিয়েছিল।
আমি তার পায়ে ফুঁ দিতে দিতে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমার মা-বাপ
আপনার ওপর কোরবান হোক। আপনার আগ-পিছের সমস্ত গোনাহ আল্লাহপাক মাফ করে
দিয়েছেন। তারপরও আপনি কেন এভাবে কষ্ট করছেন? তখন রাসূলে পাক (সা.) বললেন,
আমি কি আল্লাহপাকের শোকর আদায় করব না? যিনি সমস্ত গোনাহ থেকে পবিত্র, তিনি
যদি এভাবে কান্নাকাটি করতে পারেন, সে হিসেবে আমরা কি করছি? আমরা কি এই
বরকতময় রাত পেয়ে আমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছি? তাই আসুন,
কতিপয় সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করে এবং খাঁটি তওবার মাধ্যমে নিজেদেরকে
পূতপবিত্র করি। এ সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে।
এই রাতে যাদের দোয়া কবুল হবে না
রাসূলে পাক (সা.) বলেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহপাক সর্বনি¤œ
আকাশে নেমে আসেন। সমস্ত ক্ষমা প্রার্থী মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন। তবে
মুশরিক, হিংসাকারী, রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ও ধর্ষণকারী ছাড়া আর যাদের ক্ষমা
করবেন না তারা হলেনÑ জাদুকর, গণক, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী, অশ্লীল গায়ক,
পরস্পর শত্রুতাভাব পোষণকারী, অত্যাচারী শাসক ও তার সহযোগী, মিথ্যা শপথে
পণ্য বিক্রয়কারী, মদ্যপ, পরস্ত্রীগামী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, কৃপণ,
পরোক্ষ নিন্দাকারী ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না।
আল্লাহ আমাদেরকে ওহাবী ফেতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
Copyright Daily Inqilab
Copyright Daily Inqilab
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন