shobeborat o amader vabona



হান আল্লাহতায়ালা কোনো কোনো সময়কে করেছেন মহিমান্বিত ও বরকতময়। শবেবরাত তাদের অন্যতম। এটি ইসলামী ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে শবেবরাতের মর্যাদা যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তাতে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। উপমহাদেশে এটি ভাগ্যরজনী বলে পরিচিতি পেয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় একে ‘লাইলাতুস সাক্কি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। হাদিস শরিফে একে লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রাত বলা হয়েছে। কেননা শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতই পুণ্যময় শবেবরাত।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত কর এবং পরের দিন রোজা রাখ। কেননা রাতে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করব? কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। সুবহে সাদিক পর্যন্ত এ ডাক অব্যাহত থাকে। -ইবনে মাজাহ

অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, পনের শাবান রাতে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বনি কালব গোত্রের মেষের পশম অপেক্ষা অধিক লোকদের ক্ষমা করেন। -তিরমিজি শরিফ

হজরত উসমান ইবনু আবিল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন মধ্য-শাবানের রাত আসে তখন একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। ব্যভিচারিণী ও শিরকে জড়িত ছাড়া যত লোক যা কিছু চাইবে সবাইকেই তাদের প্রার্থনা পূরণ করে দেয়া হবে। -বায়হাকি শরিফ

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচ রাতের দোয়া বিফল হয় না। রজব মাসের প্রথম রাত, মধ্য শাবানের রাত, জুমআর রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত। -তারিখ দিমাশক।

হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন ৪টি রাত আছে যাতে আল্লাহতায়ালা সব মানুষের ওপর নেকির দরজা খুলে দেন। তা হল দুই ঈদের রাত, শাবানের মধ্যবর্তী রাত ও আরাফার রাত। -লিসানুল মিযান

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, একদা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে জিবরাইল (আ.) এসে বলল, হে মুহাম্মদ (সা.) আপনি আকাশের দিকে তাকান। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, জান্নাতের সব দরজা খোলা রয়েছে। প্রথম দরজায় দাঁড়িয়ে এক ফেরেশতা ঘোষণা করছে, যে ব্যক্তি এ রাতে রুকু করছে তার জন্য সুসংবাদ, যে ব্যক্তি এ রাতে সেজদা করছে তার জন্য সুসংবাদ।

সহিহ বুখারি শরিফে বর্ণিত হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, মধ্য শাবানের রাতে কিছু আছে কী? এ রাতে চলতি বছরে জন্মগ্রহণকারী আদম সন্তানদের নাম এবং চলতি বছরে মৃত্যুবরণকারী আদম সন্তানদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রাতে আদম সন্তানদের আমল উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তাদের রিজিক অবতীর্ণ হয়।

হজরত আয়শা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে খুঁজে পেলাম না। তখন বের হয়ে দেখি তিনি জান্নাতুল বাকিত (আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে) রয়েছেন। তিনি বললেন, তুমি কি আশংকা করছিলে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার ওপর অবিচার করবেন! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি আপনার অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গেছেন। তখন তিনি বলেন, মহিমান্বিত পরাক্রান্ত আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং ‘কালব’ গোত্রের মেষপালের পশমের অধিক সংখ্যককে ক্ষমা করেন। -তিরমিযি, ইবনু মাজাহ এবং আহমদ বিন হাম্বল।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মধ্য শাবানের রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) আমাকে বললেন, আপনার মাথা আকাশের দিকে তুলুন, কেননা এই রাত অত্যন্ত প্রাচুর্যমণ্ডিত। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এতে কোন ধরনের প্রাচুর্য (বরকত) আছে? উত্তরে হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, এ রাতে আল্লাহতায়ালা রহমতের তিনশ’ দরজা খুলে দেন।

হজরত বড়পীর মহিউদ্দীন আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) গুনিয়াতুত তালেবীন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, মানুষের জন্য দুনিয়াতে যেমন দুটি ঈদ পালিত হয় তেমনি আকাশেও ফেরেশতাদের জন্য দুটি ঈদ পালিত হয়। তা হল শবেবরাত ও শবেকদরের রাত। তাদের ঈদ রাতে হওয়ার কারণ হল, তাদের আহার ও নিদ্রা নেই। উপমহাদেশের মহান অলিয়ে কামেল শামসুল ওলামা আল্লামা হজরত শাহ সুফি সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হজরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী (রহ.) নূরে হক গঞ্জেনূর গ্রন্থে লিখেছেন, শাবানের চৌদ্দ তারিখ শবেবরাতের রাতে বছরের ফলাফল লেখা হয়। তাই তিনি এক রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর শত ধন লাভের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন।

হাদিস শরিফের অসংখ্য বর্ণনায় শবেবরাতের সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তা সত্ত্বেও অনেকেই এসব হাদিসকে দুর্বল আখ্যা দিয়ে শবেবরাত পালন থেকে বিরত থাকেন। বিশ্বখ্যাত আল্লাহর অলিরা যারা আল্লাহর রহস্য সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং বিশ্বময় ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথিকৃত হিসেবে কাজ করেছেন তারা শবেবরাত পালন করেছেন এবং সবাইকে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে এ রাতের ইবাদত পালনের প্রতি সবার সচেষ্ট হওয়া উচিত।

তবে শবেবরাতের ইবাদত নির্দিষ্ট রাতের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় তা যথা তারিখে পালন করতে না পারলে কাক্সিক্ষত ফজিলত লাভ করা যাবে না। নির্দিষ্ট তারিখে শবেবরাত পেতে হলে সঠিকভাবে চান্দ্রমাসের হিসাব গণনা করতে হবে। স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখার মাধ্যমে একদিন বা দুইদিন বিলম্বে শবেবরাত পালনের মাধ্যমে বর্ণিত ফজিলত লাভ করা সম্ভব হবে না।
সংগৃহীত

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী