ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড উপকুল

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে উত্তর-পূর্ব দিকে যাচ্ছে। তবে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ঝড় থেমে যাবে বলে জানিয়েছে ঢাকার আবহাওয়া অফিস। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপক তাণ্ডবে অন্তত ২১ জন মারা গেছে। দুপুর ১২টার দিকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস চট্টগ্রাম উপকুলে আঘাত হানে।
দেশের উপকুলীয় এলাকার ১৮ জেলায় ৩৫ হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসাশন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
পতেঙ্গার ঝিনুক মার্কেট ঝড়ে নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেছে।
হাতিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে নিঝুম দ্বীপ প্লাবিত হয়েছে। ফলে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ধেয়ে আসার খবরে চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং কক্সবাজারের জন্য ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়।
ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে রাজধানী ছাড়াও দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, দক্ষিণ পশ্চিম ও দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের জেলাগুলোত রাত থেকেই বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। কোথাও কোথাও দমকা হাওয়া কিংবা ঝড়ো হাওয়ার সাথে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ চলছে।
আবহওয়া অফিস বলছে, গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাজধানীতে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সব চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। এখানে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
এছাড়া গতকাল রাত থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বরিশাল শহরের বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রামের নিচু এলাকাগুলোতে হাটু সমান পানি জমার খবর পাওয়া গেছে।
ঝড়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ছয় জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া সীতাকু-ে মারা গেছেন আরও তিনজন। নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন ষোলশহর এলাকায় রাকিব নামের এক পথশিশুর মৃত্যু হয়েছে। পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলায় গত রাতে ঝড়ে ঘর চাপা পড়ে নয়া বিবি (৫০) নামের এক নারী মারা গেছেন। ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে দুজন নিহত হয়েছে। কুতুবদিয়ায় সাগরে দুটি ট্রলারের চাপায় ফজলুল হক (৫৫) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। একই উপজেলায় দেয়াল চাপায় মারা গেছেন আরও একজন। বিকালে সৈকত  থেকে এক জেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নোয়াখালীতে জোয়ারের পানির তোড়ে হাতিয়ায় মা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন, হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের মিনারা বেগম (৩৫) ও ১০ বছরের মেয়ে মরিয়মনেছা এবং জাহাজমার ইউনিয়নের রিপুলা বেগম (৪৭)। এছাড়া সন্দ্বিপ ও কুতুবদিয়ায় ২ শিশুর মৃত্যু‘র খবর পাওয়া গেছে। ফেনীতে মারা গেছেন একজন।
ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত এলাকায় বহু ঘরবাড়ি ও গাছপালা ধ্বংস হয়েছে। গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে রাস্তা। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে মাছের খামার। বিকালে ঘূণিঝড় স্থলভাগে পুরো উঠে যাওয়ার পর আবহাওয়া অফিস বিপৎসঙ্কেত ৭ থেকে নামিয়ে তিন নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়া এলাকা থেকে দুর্গত মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আগামীকাল রোববারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী