শবেবরাত- আমলের নমুনা।


মহান রাব্বুল আলামিনের অন্তহীন রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও অফুরন্ত দান ইহসানের সুসংবাদ বহন করে রেখেছে পবিত্র ‘শবেবরাত’। যারা এ রাত বন্দেগীরত অবস্থায় অতিবাহিত করবে, তারা পরম রাব্বুল আলামিনের শুভদৃষ্টির ফলশ্রুতিতে হবে চির সাফল্যম-িত। হাদিস শরিফে বর্ণিত, প্রিয় নবী হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : ‘যখন শাবান মাসের মধ্যভাগের রজনী আসে, তখন তোমরা সে রাতকে ইবাদতরত অবস্থায় অতিবাহিত কর এবং তারপরের দিন রোজা পালন কর। কেননা, এই পবিত্র রাতের শুভলগ্নে মাগরিব থেকে আল্লাহপাক দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হন (অর্থাৎ নিজের রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন)। এবং ঘোষণা করে থাকেন, আছে কেউ ক্ষমাপ্রার্থী? যাকে আমি ক্ষমা করি। আছে কেউ রিজিক প্রার্থী? যাকে আমি রিজিক দান করি। আছে কেউ বিপদগ্রস্ত? যাকে আমি বিপদমুক্ত করি।’ এভাবে সারা রাতব্যাপী আল্লাহপাকের রহমতের অনবরত বারিধারা বর্ষিত হতে থাকে। এ কথা অতিবাস্তব যে, শবেবরাতের বরকতে পাপী বান্দা পাপমুক্ত হতে পারে, অভাবীরা অভাবমুক্ত হতে পারে, বিপদগ্রস্তরা বিপদমুক্ত হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই সৌভাগ্য তাদেরই জন্য, যারা শবেবরাতে পরিপূর্ণ আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতার সাথে পরম মাওলার খেদমতে নিজের অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থী হয়ে ভবিষ্যৎ জীবনকে ইসলামী জীবনধারায় গঠন করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করবে। যারা চিরকল্যাণকামী, তাদেরকে প্রতি মূহূর্তে আল্লাহপাকের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। শুধুমাত্র শবেবরাতে সম্পর্ক স্থাপন করলে পরিপূর্ণ প্রতিফল পাওয়া যাবে না। বরং শবেবরাতের রাতের ফয়েজ ও বরকত হাসিল করতে হলে প্রতিটি মুসলিম নর-নারীকে ইসলামী বিধানমতো জীবনযাপন করতে হবে। আর ইসলামী জীবনের চূড়ান্ত পথনির্দেশিকা হচ্ছে কোরআনে কারীম ও সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তার জীবন্তচিত্র হলো প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধুময় জীবনাদর্শ। একবার এক সাহাবি দরবারে নববীতে হাজির হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইসলাম সম্পর্কে আমাকে এমন জ্ঞান দিন, যা আমার জন্য যথেষ্ট হয়। তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তুমি বল ‘আমানতুবিল্লাহ ছুম্মাসতাকিম’, অর্থাৎ আমি ঈমান এনেছি আল্লাহপাকের প্রতি। অতঃপর তোমার একান্ত কর্তব্য হলো আল্লাহপাকের আদেশ-নিষেধের প্রতি আজীবন অবিচল নিষ্ঠা অবলম্বন করা। এই পবিত্র শবেবরাতে একদল লোক আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়ে মসজিদে ও স্বগৃহে নামাজরত থাকেন। আর একদল লোক তাদেরকে আল্লাহর বন্দেগী থেকে বিচ্যুত করার জন্য আতশবাজি ও পটকা ফুটানোর মতো শয়তানী কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদেরকে এরূপ ইসলামবিদ্বেষী ও বিজাতীয় প্রথা থেকে বিরত থাকা উচিত। নতুবা মহান আল্লাহপাকের মর্মান্তিক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। হাদিস শরিফে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবেবরাত ‘জান্নাতুল বাকী’ তাশরীফ নিতেন এবংমুমিন-মুমিনাত ও শহীদগণের রূহের মাগফিরাত কামনা করে পরম মাওলার দরবারে দোয়া করতেন। প্রিয় নবী হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ তোমরা তোমাদের পেটকে পবিত্র রাখ। অর্থাৎ হালাল রুজি অর্জন কর, তবে তোমাদের দোয়া কবুল করা হবে। হাদিস শরিফে আরো বর্ণিত আছে যে, হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন ধরনের লোকের কথা বললেন, যাদের দোয়া অগ্রাহ্য হবে না। তাদের মধ্যে একজন হলেন পিতা। কেননা, পিতার দোয়া তার সন্তানের জন্য এমনি এক দোয়া যা আল্লাহপাক নিশ্চয়ই কবুল করে থাকেন। দোয়া কবুল হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে হামদে এলাহী। আল্লাহপাকের প্রতি শোকরিয়া জ্ঞাপন করা, তার প্রশংসা ব্যক্ত করা এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করা। আল্লাহপাক এই পবিত্র শবেবরাতের মাধ্যমে যেন বিশ্ব মুসলিম জাতিকে শান্তি, স্বস্তি, উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও সঙ্গতি দান করেন। আমিন! শবেবরাতের নফল নামাজ হুজুর পাক (সা.) এ পবিত্র রাতে নফল নামাজ অধিক হারে পড়তেন। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহপাক বলেছেনÑ আমার কিছু বান্দা নফল নামাজ পড়তে পড়তে আমার এত আপন হয়ে যায় যে, আমি তার চোখ হয়ে যাই- যার থেকে সে দেখে, আমি তার জবান হয়ে যাই-যার থেকে কথা বলে, আমি তার হাত হই-যার থেকে সে কাজ করে, সে আমার মর্জির বিরুদ্ধে কোনো কাজ করে না। শবেবরাতের নামাজের নিয়ত নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকআতাই ছালাতি লাইলাতুল বরাত মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। নামাজ পড়ার নিয়ম দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়বেন। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ৩ বার সূরা এখলাছ (কুলহু ওয়াল্লাহ) পড়বেন। কিছু লোক নামাজের রাকাত বৃদ্ধির খাতিরে তাড়াতাড়ি করে নামাজ পড়ে থাকেন তা ঠিক নয়, বরং আল্লাহর দরবারে সেই ইবাদত প্রশংসনীয় যে ইবাদত আন্তরিকতা ও শান্ত মনে আদায় করা হয়। প্রসিদ্ধ বুজুর্গানে দ্বীন হতে শবেবরাতের কিছু ওয়াযিফা বর্ণিত আছে। এই ওয়াযিফার নিয়ম নি¤œ বর্ণিত হলো : প্রথমে মাগরিবের নামাজ জামাতের সাথে পড়বেন। অতঃপর সুন্নত ও নফল শেষ করে তিনবার সূরা ইয়াসিন পড়বেন, প্রত্যেকবার সূরার শুরুতে ও শেষে ১১ বার দরূদ শরিফ পড়তে হবে। প্রথমবার এই উদ্দেশ্য করে পড়তে হবে যে, এই তেলাওয়াতের বিনিময়ে আল্লাহপাক যেন সমস্ত বালামুছিবত থেকে নাজাত দান করেন এবং যাহেরী-বাতেনী শান্তি প্রদান করেন। দ্বিতীয়বার এ উদ্দেশ্যে পড়বেন, যেন আল্লাহপাক সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন দান করেন এবং ঈমানের ওপর মৃত্যুবরণ করার তৌফিক দান করেন। তৃতীয়বার এই উদ্দেশ্য করে পড়বেন যেন আল্লাহপাক এই তেলাওয়াতের বিনিময়ে রিজিকের মধ্যে বরকত দান করেন এবং অভাব ও দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করেন। অতঃপর সূরা ইয়াসিন ও দোয়া দরুদের ছাওয়াব হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে প্রেরণ করবেন এবং তার সমস্ত বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম ও অনুসারীদের প্রতিও অনুরূপভাবে প্রেরণ করবেন। তারপর নিজের এবং সমস্ত মুসলমানের জন্য মনোযোগ সহকারে দোয়া করবেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাহাড়পুর রচনা

সোনারগাঁও রচনা

প্রতীক, সংকেত, যোজনী