নামাযের সুন্নাত
নামাযের সুন্নাত সমূহ
ক. দাঁড়ানো অবস্থায় সুন্নাত ১১টি
১. উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে রাখা এবং উভয় পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল, উর্ধ্বে এক বিঘত পরিমাণ ফাঁকা রাখা।
(নাসায়ী হাদীস নং- ৮৯২/ হিন্দিয়া, ১ : ৭৩)
২. তাকবীরে তাহরীমার সময় চেহারা কিবলার দিকে রেখে নজর সিজদার জায়গায় রাখা এবং হাত উঠানোর সময় মাথা না ঝুঁকানো।
(তিরমিযী, হাদীস নং- ৩০৪/ মুস্তাদরাক, ১৭৬১)
৩. উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো। অর্থাৎ উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা কানের লতি পর্যন্ত উঠানো। (মুসলিম, হাদীস নং- ৩৯১)
৪. হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলসমূহ ও হাতের তালু কিবলামুখী রাখা।
(তাবরানী আউসাত, হাদীস নং- ৭৮০১)
৫. আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিকভাবে রাখা অর্থাৎ একেবারে মিলিয়েও না রাখা, আবার বেশি ফাঁক ফাঁক করেও না রাখা।
(মুস্তাদরাক, হাদীস নং- ৮৫৬)
৬. ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলার পর সাথে সাথে মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা বলা। অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা যেন ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে শেষ না হয়। এরূপ হলে মুক্তাদীর নামায হবে না। (মুসলিম, হাদীস নং ৪১৪, ৪১৫/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৩৪)
৭. হাত বাঁধার সময় ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের (পাতার) উপর রাখা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭২৬/ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস নং- ৩৯৪২)
৮. ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরা। (তিরমিযী, হাদীস নং- ২৫২/ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৮১১)
৯. অবশিষ্ট তিন আঙ্গুল বাম হাতের উপর স্বাভাবিকভাবে বিছিয়ে রাখা। (ফাতহুল কাদীর, ১ : ২৫০)
১০. নাভীর নীচে হাত বাঁধা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৫৬/ হিন্দিয়া, ১ : ৭৩)
১১. ছানা পড়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৭৫, ৭৭৬)
খ. ক্বিরা‘আতের সুন্নাত ৭টি
১. প্রথম রাকা‘আতে ছানা পড়ার পর পূর্ণ আ‘উযুবিল্লাহ পড়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৬৪/ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৮০৭)
২. প্রতি রাকা‘আতে সূরা ফাতিহা ও সূরা মিলানোর পূর্বে পূর্ণ বিসমিল্লাহ পড়া। (নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং- ৯০৫)
৩. সূরা ফাতিহার পর সকলের জন্য নীরবে ‘আমীন’ বলা। (সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং- ১২৫৬/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৮০)
৪. ফজর এবং যোহরের নামাযে ত্বিওয়ালে মুফাসসাল অর্থাৎ লম্বা ক্বিরা‘আত (সূরা ‘হুজুরাত’ থেকে সূরা ‘বুরূজ’ পর্যন্ত), আসর এবং ইশার নামাযে আউসাতে মুফাসসাল অর্থাৎ মধ্যম ক্বিরা‘আত (সূরা ‘ত্বরিক’ থেকে সূরা ‘লাম-ইয়াকুন’ পর্যন্ত) এবং মাগরিবে ক্বিসারে মুফাসসাল অর্থাৎ ছোট ক্বিরা‘আত (সূরা ‘ইযা-যুলযিলাত্’ থেকে সূরা ‘নাস’ পর্যন্ত) থেকে প্রতি রাকা‘আতে যে কোন একটি সূরা বা কোন কোন সময় বড় সূরা থেকে এ পরিমাণ ক্বিরা‘আত পড়া।
(নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং- ৯৮৩/ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ২৬৭২)
৫. ফজরের প্রথম রাক‘আত দ্বিতীয় রাক‘আত অপেক্ষা লম্বা করা। অন্যান্য ওয়াক্তে উভয় রাক‘আতে ক্বিরা‘আতের পরিমাণ সমান রাখা উচিত। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৪৫১, ৪৫২)
৬. ক্বিরা‘আত অত্যন্ত তাড়াতাড়ি বা একেবারে ধীর গতিতে না পড়া, বরং মধ্যম গতিতে পড়া। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৭৩৩)
৭. ফরয নামাযের তৃতীয় এবং চতুর্থ রাক‘আতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া।
(বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৭৬)
গ. রুকুর সুন্নাত ৮টি
১. তাকবীর বলা অবস্থায় রুকুতে যাওয়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৮৯)
২. উভয় হাত দ্বারা হাঁটু ধরা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৯০)
৩. হাতের আঙ্গুলসমূহ ফাঁক করে ছড়িয়ে রাখা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৩১)
৪. উভয় হাত সম্পূর্ণ সোজা রাখা, কনুই বাঁকা না করা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৩৪)
৫. পায়ের গোছা, হাঁটু ও উরু সম্পূর্ণ সোজা রাখা। হাঁটু সামনের দিকে বাঁকা না করা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৮৬৩)
৬. মাথা, পিঠ ও কোমর সমান রাখা, উঁচু-নীচু না করা এবং পায়ের দিকে নজর রাখা। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৪৯৮/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮২৮)
৭. রুকুতে কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবীহ (সুবহানা রাব্বিয়াল ‘আযীম) পড়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৮৮৯)
৮. রুকু হতে উঠার সময় ইমামের ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্ এবং মুক্তাদীর ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ এবং একাকী নামায আদায়কারীর উভয়টি বলা।
(আলমগীরী, ১ : ১২/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৮৯, ৭৩৩)
বি.দ্র. রুকু থেকে উঠে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে এক তাসবীহ পরিমাণ স্থিরভাবে দাঁড়ানো জরুরী। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮০০, ৮০১, ৮০২)
ঘ. সিজদার সুন্নাত ১২টি
১. তাকবীর বলা অবস্থায় সিজদায় যাওয়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮০৩)
বি.দ্র. সিজদায় যাওয়া ও সিজদা হতে দাঁড়ানোর সময় তাকবীর এক আলিফ থেকে অধিক টানা উচিত নয়। অবশ্য হদর এবং তারতীলের পার্থক্য থাকবে। (শামী, ১ : ৪৮০)
২. প্রথমে উভয় হাঁটু মাটিতে রাখা। (নাসায়ী, হাদীস নং- ১০৮৯/ আবু দাউদ, হাদীস নং- ৮৩৮)
৩. তারপর হাঁটু থেকে আনুমানিক এক হাত দূরে উভয় হাত রাখা এবং হাতের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে সম্পূর্ণরূপে মিলিয়ে রাখা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ১৮৮৮২/ সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদীস নং- ৬৪৩)
৪. তারপর উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা বরাবর নাক রাখা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ১৮৮৮০)
৫. তারপর কপাল রাখা। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ১৮৮৮০)
৬. অতঃপর দুই হাতের মাঝে সিজদা করা এবং দৃষ্টি নাকের অগ্রভাগের দিকে রাখা। (মুসলিম, হাদীস নং- ৪০১/ মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং- ১৭৬১)
৭. সিজদায় পেট উরু থেকে পৃথক রাখা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ২৩৬৬২/ আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৩৫)
৮. পাঁজড়দ্বয় থেকে উভয় বাহু পৃথক রাখা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮০৭)
৯. কনুই মাটি ও হাঁটু থেকে পৃথক রাখা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮২২)
১০. সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সিজদার তাসবীহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা ) পড়া।
১১. তাকবীর বলা অবস্থায় সিজদা হতে উঠা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮২৫)
১২. প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর উভয় হাত, তারপর উভয় হাঁটু উঠানো। (তিরমিযী, হাদীস নং- ২৬৮/ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ২৯৫৮)
বি.দ্র.- দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটু মাটিতে লাগার আগ পর্যন্ত বুক সম্পূর্ণ সোজা রাখা জরুরী। বিনা ওজরে বুক ঝুঁকিয়ে সিজদায় গেলে একাধিক রুকু হয়ে সুন্নাতের খেলাফ হবে। দু‘সিজদার মাঝে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে এক তাসবীহ পরিমাণ স্থির হয়ে বসা জরুরী।
(আবু দাউদ হাদীস নং- ৮৩৮/ শামী, ১:৪৬৪)
ঙ. নামাযে বসার সুন্নাত ১৩টি
১. বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা। ডান পা সোজা ভাবে খাড়া রাখা। উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ সাধ্যমত কিবলার দিকে মুড়িয়ে রাখা।
(নাসাঈ, হাদীস নং- ১১৫৮)
২. উভয় হাত রানের উপর হাঁটু বরাবর করে রাখা এবং দৃষ্টি দুই হাঁটুর মাঝ বরাবর রাখা।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ১৬১০৬)
৩. ‘আশ্হাদু’ বলার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা এক সাথে মিলিয়ে গোলাকার বৃত্ত বানানো এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলিদ্বয় মুড়িয়ে রাখা এবং ‘লা-ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল সামান্য উঁচু করে ইশারা করা। অতঃপর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙ্গুলের মাথা সামান্য ঝুঁকানো। হাঁটুর সাথে না লাগানো।
(আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭২৬/ নাসাঈ, হাদীস নং- ১২৭৪)
৪. আখেরী বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর দরূদ শরীফ পড়া। (তিরমিযী, হাদীস নং- ৩৪৭৭)
৫. দরূদ শরীফের পর দু‘আয়ে মাছুরা পড়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮৩৪/ তিরমিযী, হাদীস নং- ৫৯৩)
৬. উভয় দিকে সালাম ফিরানো।(তিরমিযী, হাদীস নং- ২৯৫)
৭. ডান দিকে আগে সালাম ফিরানো। উভয় সালাম কিবলার দিক থেকে আরম্ভ করা এবং সালামের সময় দৃষ্টি কাঁধের দিকে রাখা।(মুসলিম, হাদীস নং- ৫৮২)
৮. ইমামের উভয় সালামে মুক্তাদী, ফেরেশতা ও নামাযী জ্বিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (মুসলিম, হাদীস নং- ৪৩১)
৯. মুক্তাদীগণের উভয় সালামে ইমাম, অন্যান্য মুসল্লী, ফেরেশতা ও নামাযী জ্বিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ৩১৪৯, ৩১৫২)
১০. একাকী নামাযী ব্যক্তি শুধু ফেরেশতাগণের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ৩১৪০)
১১. মুক্তাদীগণের ইমামের সালাম ফিরানোর পরপরই সালাম ফিরানো। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮৩৮)
১২. দ্বিতীয় সালাম প্রথম সালাম অপেক্ষা আস্তে বলা।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস নং- ৩০৫৭)
১৩. ইমামের দ্বিতীয় সালাম ফিরানো শেষ হলে মাসবূকের ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের জন্য দাঁড়ানো। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ৩১৫৬)
ক. দাঁড়ানো অবস্থায় সুন্নাত ১১টি
১. উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে রাখা এবং উভয় পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল, উর্ধ্বে এক বিঘত পরিমাণ ফাঁকা রাখা।
(নাসায়ী হাদীস নং- ৮৯২/ হিন্দিয়া, ১ : ৭৩)
২. তাকবীরে তাহরীমার সময় চেহারা কিবলার দিকে রেখে নজর সিজদার জায়গায় রাখা এবং হাত উঠানোর সময় মাথা না ঝুঁকানো।
(তিরমিযী, হাদীস নং- ৩০৪/ মুস্তাদরাক, ১৭৬১)
৩. উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো। অর্থাৎ উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা কানের লতি পর্যন্ত উঠানো। (মুসলিম, হাদীস নং- ৩৯১)
৪. হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলসমূহ ও হাতের তালু কিবলামুখী রাখা।
(তাবরানী আউসাত, হাদীস নং- ৭৮০১)
৫. আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিকভাবে রাখা অর্থাৎ একেবারে মিলিয়েও না রাখা, আবার বেশি ফাঁক ফাঁক করেও না রাখা।
(মুস্তাদরাক, হাদীস নং- ৮৫৬)
৬. ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলার পর সাথে সাথে মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা বলা। অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা যেন ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে শেষ না হয়। এরূপ হলে মুক্তাদীর নামায হবে না। (মুসলিম, হাদীস নং ৪১৪, ৪১৫/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৩৪)
৭. হাত বাঁধার সময় ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের (পাতার) উপর রাখা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭২৬/ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস নং- ৩৯৪২)
৮. ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরা। (তিরমিযী, হাদীস নং- ২৫২/ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৮১১)
৯. অবশিষ্ট তিন আঙ্গুল বাম হাতের উপর স্বাভাবিকভাবে বিছিয়ে রাখা। (ফাতহুল কাদীর, ১ : ২৫০)
১০. নাভীর নীচে হাত বাঁধা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৫৬/ হিন্দিয়া, ১ : ৭৩)
১১. ছানা পড়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৭৫, ৭৭৬)
খ. ক্বিরা‘আতের সুন্নাত ৭টি
১. প্রথম রাকা‘আতে ছানা পড়ার পর পূর্ণ আ‘উযুবিল্লাহ পড়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৬৪/ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৮০৭)
২. প্রতি রাকা‘আতে সূরা ফাতিহা ও সূরা মিলানোর পূর্বে পূর্ণ বিসমিল্লাহ পড়া। (নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং- ৯০৫)
৩. সূরা ফাতিহার পর সকলের জন্য নীরবে ‘আমীন’ বলা। (সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং- ১২৫৬/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৮০)
৪. ফজর এবং যোহরের নামাযে ত্বিওয়ালে মুফাসসাল অর্থাৎ লম্বা ক্বিরা‘আত (সূরা ‘হুজুরাত’ থেকে সূরা ‘বুরূজ’ পর্যন্ত), আসর এবং ইশার নামাযে আউসাতে মুফাসসাল অর্থাৎ মধ্যম ক্বিরা‘আত (সূরা ‘ত্বরিক’ থেকে সূরা ‘লাম-ইয়াকুন’ পর্যন্ত) এবং মাগরিবে ক্বিসারে মুফাসসাল অর্থাৎ ছোট ক্বিরা‘আত (সূরা ‘ইযা-যুলযিলাত্’ থেকে সূরা ‘নাস’ পর্যন্ত) থেকে প্রতি রাকা‘আতে যে কোন একটি সূরা বা কোন কোন সময় বড় সূরা থেকে এ পরিমাণ ক্বিরা‘আত পড়া।
(নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং- ৯৮৩/ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ২৬৭২)
৫. ফজরের প্রথম রাক‘আত দ্বিতীয় রাক‘আত অপেক্ষা লম্বা করা। অন্যান্য ওয়াক্তে উভয় রাক‘আতে ক্বিরা‘আতের পরিমাণ সমান রাখা উচিত। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৪৫১, ৪৫২)
৬. ক্বিরা‘আত অত্যন্ত তাড়াতাড়ি বা একেবারে ধীর গতিতে না পড়া, বরং মধ্যম গতিতে পড়া। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৭৩৩)
৭. ফরয নামাযের তৃতীয় এবং চতুর্থ রাক‘আতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া।
(বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৭৬)
গ. রুকুর সুন্নাত ৮টি
১. তাকবীর বলা অবস্থায় রুকুতে যাওয়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৮৯)
২. উভয় হাত দ্বারা হাঁটু ধরা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৯০)
৩. হাতের আঙ্গুলসমূহ ফাঁক করে ছড়িয়ে রাখা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৩১)
৪. উভয় হাত সম্পূর্ণ সোজা রাখা, কনুই বাঁকা না করা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৩৪)
৫. পায়ের গোছা, হাঁটু ও উরু সম্পূর্ণ সোজা রাখা। হাঁটু সামনের দিকে বাঁকা না করা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৮৬৩)
৬. মাথা, পিঠ ও কোমর সমান রাখা, উঁচু-নীচু না করা এবং পায়ের দিকে নজর রাখা। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৪৯৮/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮২৮)
৭. রুকুতে কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবীহ (সুবহানা রাব্বিয়াল ‘আযীম) পড়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৮৮৯)
৮. রুকু হতে উঠার সময় ইমামের ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্ এবং মুক্তাদীর ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ এবং একাকী নামায আদায়কারীর উভয়টি বলা।
(আলমগীরী, ১ : ১২/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৮৯, ৭৩৩)
বি.দ্র. রুকু থেকে উঠে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে এক তাসবীহ পরিমাণ স্থিরভাবে দাঁড়ানো জরুরী। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮০০, ৮০১, ৮০২)
ঘ. সিজদার সুন্নাত ১২টি
১. তাকবীর বলা অবস্থায় সিজদায় যাওয়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮০৩)
বি.দ্র. সিজদায় যাওয়া ও সিজদা হতে দাঁড়ানোর সময় তাকবীর এক আলিফ থেকে অধিক টানা উচিত নয়। অবশ্য হদর এবং তারতীলের পার্থক্য থাকবে। (শামী, ১ : ৪৮০)
২. প্রথমে উভয় হাঁটু মাটিতে রাখা। (নাসায়ী, হাদীস নং- ১০৮৯/ আবু দাউদ, হাদীস নং- ৮৩৮)
৩. তারপর হাঁটু থেকে আনুমানিক এক হাত দূরে উভয় হাত রাখা এবং হাতের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে সম্পূর্ণরূপে মিলিয়ে রাখা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ১৮৮৮২/ সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদীস নং- ৬৪৩)
৪. তারপর উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা বরাবর নাক রাখা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ১৮৮৮০)
৫. তারপর কপাল রাখা। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ১৮৮৮০)
৬. অতঃপর দুই হাতের মাঝে সিজদা করা এবং দৃষ্টি নাকের অগ্রভাগের দিকে রাখা। (মুসলিম, হাদীস নং- ৪০১/ মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং- ১৭৬১)
৭. সিজদায় পেট উরু থেকে পৃথক রাখা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ২৩৬৬২/ আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৩৫)
৮. পাঁজড়দ্বয় থেকে উভয় বাহু পৃথক রাখা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮০৭)
৯. কনুই মাটি ও হাঁটু থেকে পৃথক রাখা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮২২)
১০. সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সিজদার তাসবীহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা ) পড়া।
১১. তাকবীর বলা অবস্থায় সিজদা হতে উঠা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮২৫)
১২. প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর উভয় হাত, তারপর উভয় হাঁটু উঠানো। (তিরমিযী, হাদীস নং- ২৬৮/ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ২৯৫৮)
বি.দ্র.- দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটু মাটিতে লাগার আগ পর্যন্ত বুক সম্পূর্ণ সোজা রাখা জরুরী। বিনা ওজরে বুক ঝুঁকিয়ে সিজদায় গেলে একাধিক রুকু হয়ে সুন্নাতের খেলাফ হবে। দু‘সিজদার মাঝে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে এক তাসবীহ পরিমাণ স্থির হয়ে বসা জরুরী।
(আবু দাউদ হাদীস নং- ৮৩৮/ শামী, ১:৪৬৪)
ঙ. নামাযে বসার সুন্নাত ১৩টি
১. বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা। ডান পা সোজা ভাবে খাড়া রাখা। উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ সাধ্যমত কিবলার দিকে মুড়িয়ে রাখা।
(নাসাঈ, হাদীস নং- ১১৫৮)
২. উভয় হাত রানের উপর হাঁটু বরাবর করে রাখা এবং দৃষ্টি দুই হাঁটুর মাঝ বরাবর রাখা।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ১৬১০৬)
৩. ‘আশ্হাদু’ বলার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা এক সাথে মিলিয়ে গোলাকার বৃত্ত বানানো এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলিদ্বয় মুড়িয়ে রাখা এবং ‘লা-ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল সামান্য উঁচু করে ইশারা করা। অতঃপর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙ্গুলের মাথা সামান্য ঝুঁকানো। হাঁটুর সাথে না লাগানো।
(আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭২৬/ নাসাঈ, হাদীস নং- ১২৭৪)
৪. আখেরী বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর দরূদ শরীফ পড়া। (তিরমিযী, হাদীস নং- ৩৪৭৭)
৫. দরূদ শরীফের পর দু‘আয়ে মাছুরা পড়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮৩৪/ তিরমিযী, হাদীস নং- ৫৯৩)
৬. উভয় দিকে সালাম ফিরানো।(তিরমিযী, হাদীস নং- ২৯৫)
৭. ডান দিকে আগে সালাম ফিরানো। উভয় সালাম কিবলার দিক থেকে আরম্ভ করা এবং সালামের সময় দৃষ্টি কাঁধের দিকে রাখা।(মুসলিম, হাদীস নং- ৫৮২)
৮. ইমামের উভয় সালামে মুক্তাদী, ফেরেশতা ও নামাযী জ্বিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (মুসলিম, হাদীস নং- ৪৩১)
৯. মুক্তাদীগণের উভয় সালামে ইমাম, অন্যান্য মুসল্লী, ফেরেশতা ও নামাযী জ্বিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ৩১৪৯, ৩১৫২)
১০. একাকী নামাযী ব্যক্তি শুধু ফেরেশতাগণের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ৩১৪০)
১১. মুক্তাদীগণের ইমামের সালাম ফিরানোর পরপরই সালাম ফিরানো। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৮৩৮)
১২. দ্বিতীয় সালাম প্রথম সালাম অপেক্ষা আস্তে বলা।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস নং- ৩০৫৭)
১৩. ইমামের দ্বিতীয় সালাম ফিরানো শেষ হলে মাসবূকের ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের জন্য দাঁড়ানো। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ৩১৫৬)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন